দেশের আনাচকানাচে থাকা স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের নতুন পথ ও পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় জিপি এক্সিলারেটর। গত এক যুগে এই উদ্যোগ থেকে উঠে আসা অনেক অ্যাপ এখন জনপ্রিয়। উদ্যোগটির পরিকল্পনা এবং সার্বিক বিষয় নিয়ে ‘আজকের পত্রিকা’ মুখোমুখি হয়েছিল জিপি এক্সিলারেটরের প্রোগ্রাম লিড মুহাম্মদ সোহেল রানার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোস্তাফিজ মিঠু।
জিপি এক্সিলারেটর শুরু এবং আপনাদের উদ্দেশ্য জানতে চাই।
বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রামীণফোন সব সময় সমাজকে এগিয়ে নিতে চায়। বিশ্বব্যাপী স্টার্টআপ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই জায়গায় বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। এগিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই আমাদের এই প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালে। আমরা চেয়েছি, প্রযুক্তি বিষয়ে যে মেধাবীরা রয়েছেন, তাঁদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে। এতে দেশে প্রযুক্তিগত জায়গায় যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, সেগুলোতে এগিয়ে যেতে পারব আমরা। এর সঙ্গে যেন কর্মসংস্থানও তৈরি হয়। বলা যায়, তরুণ স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের প্ল্যাটফর্ম জিপি এক্সিলারেটর।
প্রকল্পটি কীভাবে পরিচালনা করেন? বাছাইপর্ব থেকে শেষ পর্যন্ত কোন কোন ধাপের মধ্য দিয়ে প্রতিযোগীদের যেতে হয়?
অ্যাপ্লিকেশন পদ্ধতির মাধ্যমে জিপি এক্সিলারেটরে অংশ নিতে হয়। এরপর বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে ১২ থেকে ১৫ জনকে প্রাথমিক পর্যায়ে বাছাই করা হয়। পরবর্তী সময়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে পাঁচ থেকে আটজন জায়গা পান। তাঁদের নিয়েই আমরা এগিয়ে যাই। চূড়ান্ত পর্বের প্রতিযোগীরা জিপি হাউসে অফিস, প্রশিক্ষক এবং প্রোডাক্ট তৈরি করা, প্রযুক্তির সুবিধা, মিডিয়া সাপোর্ট পান। এ ছাড়া তাঁদের জন্য গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীর ব্যবস্থাও করা হয়।
সম্প্রতি বিভিন্ন জেলায় এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর প্রয়োজনীয়তা কেন বোধ করলেন?
ঢাকায় এ ধরনের উদ্যোগ অনেকে নিচ্ছে। কিন্তু ঢাকার বাইরে কেউ যাচ্ছিল না। যে কাজটা জিপি এক্সিলারেটর করেছে। আমরা ২০ জেলা থেকে তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে ২০টি বুটক্যাম্প করি, যেটি সম্প্রতি শেষ হয়েছে। প্রতি জেলা থেকে ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আমরা নিয়ে আসি। তাঁদের শেখানো হয় আইডিয়া থেকে কীভাবে প্রোটোটাইপ পর্যায়ে যাওয়া যায়। এরপর সেগুলো নিয়ে একটি প্রতিযোগিতা হয় এবং একজনকে বাছাই করে তাঁকে ১ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়। বাকিদের বিভিন্ন ফ্রি কোর্স অফার করা হয়।
যে উদ্দেশ্যে জিপি এক্সিলারেটর শুরু হয়েছিল, কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে মনে করেন?
এখন পর্যন্ত আমাদের সার্বিক অবস্থা বেশ ইতিবাচক। এই প্রজেক্ট থেকে ৫০টি স্টার্টআপ তৈরি হয়েছে। সেখানে প্রায় ৫ লাখ কর্মসংস্থান রয়েছে। কয়েকটি জনপ্রিয় অ্যাপ; যেমন সেবা, আইপেজ, পার্কিং কই—এগুলো এই প্রজেক্ট থেকে উঠে এসেছে। জিপি এক্সিলারেটর যে উদ্দেশ্যে কার্যক্রম শুরু করেছিল, সেটি এখন আরও বড় আকারে চলছে। সময়ের সঙ্গে তরুণ উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বাড়ছে। কারণ, এই প্রজেক্টের সবাইকে পরবর্তী সময়ে আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। তাঁরা যদি আমাদের কোনো প্রজেক্টে যুক্ত হতে চান, সেই দরজা সব সময় খোলা থাকে।
বাছাইয়ের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তার কোন যোগ্যতাগুলো বিবেচনা করা হয়?
প্রথমত, উদ্যোক্তার ইচ্ছাশক্তি প্রবল রয়েছে কি না, সেটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। এরপর এমন একজন থাকতে হবে, যিনি ব্যবসার সঙ্গে ফুলটাইম সময় দিচ্ছেন। এ ছাড়া একটি উদ্যোগ বেশি দিন এগোতে পারে না। এর সঙ্গে উদ্যোগটি উদ্যোক্তার প্রধান আয়ের উৎস কি না, সেটিও দেখা হয়। পাশাপাশি স্টার্ট টিমে কজন সদস্য রয়েছেন। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমরা প্রাথমিক বাছাই করে থাকি।
জিপি এক্সিলারেটর নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্ল্যাটফর্ম ও কর্মসংস্থান তৈরি করা। সেটি আমরা পেরেছি মনে করি। এ ছাড়া আমাদের নতুন লক্ষ্য দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মেধাবীদের এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তুলে নেওয়া। ‘জেলায় জেলায় স্মার্ট উদ্যোক্তা’ সেই পরিকল্পনার একটি অংশ। আশা করছি, এটি আরও বড় পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারব।