প্রযুক্তি খাতে সাফল্য পেতে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। দেশে বেশি উন্নতি হয়েছে টেলিকমিউনিকেশন সেক্টরে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও নতুন প্রযুক্তির অভিযোজনে দেশের উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠীর কাছে ইন্টারনেটসহ ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে ১৩ কোটির বেশি। চলতি বছরের আগস্ট মাসের এক পরিসংখ্যান বলছে, মোবাইল ফোনের গ্রাহক প্রায় ১৮ কোটি ৮৬ লাখ। ২০১৭ সালের অক্টোবরে ওয়ালটন প্রথম এ দেশে মোবাইল ফোন তৈরি শুরু করেছিল। একে একে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে স্যামসাং, অপো, ভিভো, শাওমি, রিয়েলমি, টেকনোসহ ১৫টি প্রতিষ্ঠান, যারা বাংলাদেশে মোবাইল ফোন উৎপাদন করে আসছে।
দেশীয় হ্যান্ডসেট উৎপাদন
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে হ্যান্ডসেট উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৭৯ হাজার। এর মধ্যে টু-জি হ্যান্ডসেট উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ ৬ হাজার। থ্রি-জির কোনো হ্যান্ডসেট উৎপাদিত হয়নি। তবে ফোর-জি হ্যান্ডসেট উৎপাদিত হয়েছে ৫৭ লাখ ১৯ হাজার। আর ফাইভ-জি হ্যান্ডসেট উৎপাদিত হয়েছে ৫৪ হাজার ৭১৫টি। ২০২৩ সালে প্রায় ৪ হাজার ৪০০ জিবিপিএস আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করা হয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে বিস্তর অগ্রগতিতে প্রযুক্তিপণ্যের বাজারেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের প্রথম সপ্তাহেই কোরিয়ার অটোমোবাইল জায়ান্ট হুন্দাই এবং ফেয়ার টেকনোলজির যৌথ উদ্যোগে দেশে হুন্দাইয়ের এসইউভি ব্র্যান্ড-ক্রেটা গাড়ি উৎপাদন শুরু হয়েছে। এর সপ্তাহখানেক পরেই বাজারে আসে মেইড ইন বাংলাদেশ হুন্দাই এসইউভি ক্রেটা মডেলের গাড়ি।
পালকির স্বপ্নছোঁয়ার বছর
বিশ্বের অনেক দেশই বৈদ্যুতিক যানবাহনের দিকে ঝুঁকছে। দেশের অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রির অধরা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে স্বদেশি স্টার্টআপ ‘পালকি মোটরস’। চলমান স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পালকি মোটরস তাদের নিজস্ব সংযোজিত বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে এনেছে এ বছর। পালকি মোটরসের সিটি বয় গাড়িটি বেশ কমপ্যাক্ট—পেছনে অনায়াসে দুজন বসতে পারেন, সামনে চালকসহ দুজন। গাড়িটির আরও আছে সানরুফ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা এবং অ্যান্ড্রয়েড ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম। প্রায় পাঁচ লাখ টাকা দামের গাড়িটির আকার একটা সিএনজিচালিত অটোরিকশার সমান। চার্জ হতে সময় লাগে ঘণ্টা দুয়েক। এক চার্জে ১৫০ কিলোমিটার চলতে পারে। আর এ গাড়ির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার।
জাদু দেখিয়েছে ওয়ালটন
দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন তাদের তৈরি টেলিভিশন রপ্তানি শুরু করেছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতো ডেনমার্ক ও আয়ারল্যান্ডে। টেকসই পণ্য, উচ্চ গুণগত মান, সাশ্রয়ী মূল্য, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ডিজাইনের কারণে ইউরোপের বাজারে প্রতিযোগী সক্ষমতায় অন্যান্য ব্র্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ওয়ালটন টিভি।
প্রযুক্তির উন্নয়নে বর্তমানে ছোট-বড় সব ধরনের প্রতিষ্ঠানেই অ্যাকসেস কন্ট্রোল ডিভাইস ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ডিভাইস ব্যবহার করে কর্মীদের অফিস হাজিরাসহ খুব সহজে তাঁদের কর্মঘণ্টার হিসাব রাখা এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণ করা যায়। গত বছরের শেষ দিকে ওয়ালটনের অ্যাসেন্ট অ্যাকসেস কন্ট্রোল বাজারে এলেও এই বছর নতুন সব ফিচার নিয়ে এটি কন্ট্রোল সোনালী ব্যাংকসহ বহু প্রতিষ্ঠানে জায়গা করে নিয়েছে।
বছর শেষের মাসখানেক আগে আইপিএস প্যানেলের নতুন দুটি মডেলের স্লিম মনিটর আনে ওয়ালটন। সিনেডি ব্র্যান্ডে আসা ২১ দশমিক ৪৫ ইঞ্চি ডিসপ্লের মনিটর দুটির মডেল ডব্লিউডি২১৫আই০৯ এবং ডব্লিউডি২১৫আই১০।
আইটি ডিভাইস খাত
২০২৫ সাল নাগাদ আইটি খাতে ৫০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের প্রত্যাশা। দেশে আইটি ডিভাইস উৎপাদনকারী শিল্পে অন্তত এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশে ইলেকট্রনিক ও প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানি হচ্ছে। মিনিস্টার, আইটেলসহ বহু প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের প্রযুক্তিপণ্য নিয়ে নিরলস কাজ করে চলেছে। ফলে আগামী বছর আরও সাফল্য ধরা দেবে বলে আশা করা যায় দ্বিধাহীনভাবে।