মার্ক জাকারবার্গ ইন্টারনেটে ‘আদর্শ স্বামী’ খেতাব পেতে যাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। কেননা, গত মঙ্গলবার মেটার সিইও তাঁর স্ত্রী প্রিসিলা চ্যানকে তাঁর নিজের ৭ ফুট উচ্চতার একটি নান্দনিক ভাস্কর্য উপহার দিয়েছেন। তবে মনোচিকিৎসকেরা বলছেন, এত দামি উপহার সম্পর্কের জন্য অমঙ্গল ডেকে আনতে পারে।
বিশাল রুপালি ওই ভাস্কর্যের একটি ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন জাকারবার্গ। ছবিতে চ্যানকে কফির মগে থেকে চুমুক দিতে দেখা গেছে। পোস্টে ক্যাপশনে রসিকতা করে জাকারবার্গ লিখেছেন, ‘নিজের স্ত্রী ভাস্কর্য তৈরির রোমান ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনছি।’
তবে এই দম্পতির বিবাহবার্ষিকী মে মাসে এবং চ্যানের জন্মদিন ফেব্রুয়ারিতে হওয়ায় উপহারটি উপলক্ষভিত্তিক বলে মনে হচ্ছে না।
ইনস্টাগ্রাম পোস্টে মন্তব্যকারীদের নিউইয়র্কের শিল্পী ড্যানিয়েল আরশামের তৈরি ভাস্কর্যটির অঙ্গভঙ্গি সুন্দর নাকি বিদঘুটে, তা নিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হতে দেখা গেছে।
কিন্তু ম্যাসাচুসেটসের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও দম্পতি থেরাপি বিশেষজ্ঞ ইসাবেল মর্লি বিজনেস ইনসাইডারকে বলেছেন, এত দামি উপহার সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। তবে দামি উপহারের প্রভাব অতি ধনীদের মধ্যে একই না-ও হতে পারে বলেও জানিয়েছেন মর্লি।
আরশামের শিল্পকর্মের দাম কিছু অনলাইন মার্কেটে সর্বোচ্চ ২৯ হাজার ডলার পর্যন্ত উঠছে। আর ফোর্বসের তথ্যমতে, সর্বশেষ গত ১৫ আগস্ট জাকারবার্গের সম্পদ ১৬৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল। তবে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের আকার যাই হোক না কেন, মর্লি বলছেন, এই উপহারের উদ্দেশ্য কী ছিল?
মর্লি আরও বলেন, হঠাৎ বড় উপহারের উদ্দেশ্যে কখনো কখনো গ্রহীতাকে কুনিয়ন্ত্রণ বা তাঁর কাছ থেকে নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া পাওয়ার চেষ্টাও হতে পারে। কিছু লোক খারাপ আচরণ বা আপত্তিজনক আচরণের মাশুল হিসেবে
এসব উপহার দিয়ে থাকে। সর্বদা এমন কিছুর ব্যাপারে আপনাকে সচেতন হতে হবে।
হঠাৎ বড় উপহার পাওয়া ব্যক্তিদের কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আহ্বান জানিয়েছেন মর্লি। প্রশ্নগুলো হলো—এটি কি একটি বার্ষিকীর জন্য? উপহারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে দাতার কি কোনো প্রত্যাশা আছে? এটা কি দাতা নিজের কোনো দোষ-ত্রুটি ভুলে যাওয়ার জন্য দিচ্ছে?
জাকারবার্গের ক্ষেত্রে মর্লি বলেন, তিনি যদি এটি অনেক অর্থ দিয়ে সানগ্রে তৈরি করেন ও বিনিময়ে সঙ্গীর কাছে নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশা করেন তবে তা অকল্যাণ বয়ে আনতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় দামি উপহার শেয়ার করার আড়ালে কি?
কিছু লোক অনলাইনে স্ত্রীদের পোস্ট এবং প্রশংসা করতে খুব চটপটে হয় সত্য। তবে জাকারবার্গের বেলাতেও কি তাই? ইনস্টাগ্রামে তাঁর সাড়ে ১৪ মিলিয়ন ফলোয়ার রয়েছে। সেই আইডিতে স্ত্রীকে ভাস্কর্য উপহার দেওয়ার ছবি পোস্ট করা অন্যদের মতো একই নয়।
মর্লির প্রশ্ন, কেন হঠাৎ এই উপহার দিলেন জাকারবার্গ? তাঁর জিজ্ঞাসা, ‘এটা কি সত্যিই চ্যানের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসার এবং কৃতজ্ঞতার প্রকাশ? যে, কে ছিল এই চ্যান আর জাকারবার্গের জীবনে সেই নারী দখল করে ছিলেন কতটুকু? নাকি এর পেছনে অন্যদের কাছে নিজেকে জাহির করা এবং সঙ্গীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া পাওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।’
মর্লি বলেন, ‘মার্ক জাকারবার্গের চাওয়াতেই কি এই বিশাল ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে? নাকি প্রিসিলা তাঁকে কখনো বলেছিল, ‘প্রিয়, তুমি কি জানো? আমি শিল্প কতটা পছন্দ করি! রোমান স্থাপত্যকলায় তৈরি কোনো শিল্প আমার মন জুড়াত।’
মর্লি বলেন, উপহারটি সুন্দর নাকি বিদঘুটে তা বলতে পারার একমাত্র ব্যক্তি হলেন চ্যান। তবে মনে হচ্ছে, ভাস্কর্যটি চ্যানের মন জয় করতে পেরেছে।
চ্যান জাকারবার্গের পোস্টে মন্তব্য করেছেন, ‘আমাকে যত বেশি ভালোবাসবে, ততই ভালো?’ সঙ্গে একটি লাল হার্ট ইমোজি। এর প্রতিক্রিয়ায় জাকারবার্গ আরেকটি লাল হার্ট ইমোজি দিয়ে লিখেছেন, ‘সর্বদা’।