ফিচার ডেস্ক
গাঢ় খয়েরি রঙের একটি অসম্পূর্ণ মুখাবয়ব ফুটে উঠেছে ক্যানভাসে। ‘এআই গড: অ্যালান টুরিং-এর প্রতিকৃতি’ শিরোনামের এ চিত্রকর্ম কোনো চিত্রশিল্পীর আঁকা নয়; এঁকেছে এআই রোবট। সেটি আবার তোলা হয়েছে নিলামে।
গল্প এখানেই থেমে নেই। সেই চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলারে। এ চিত্রকর্মকে বলা হচ্ছে ‘মানবিক রোবটের মূল্যবান শিল্পকর্ম’। হিউম্যানয়েড বা মানুষের মতো দেখতে রোবট এআইডিএ তার প্রথম শিল্পকর্মটি উৎসর্গ করেছে গণিতজ্ঞ অ্যালান টুরিংকে।
গৃহস্থালির কাজ থেকে শুরু করে বৈজ্ঞানিক জটিল সমস্যার সমাধান; এ যুগে এআই যে কত কিছু করছে! শুধু গৃহস্থালি আর বিজ্ঞান বৈচিত্র্যে নিজেকে আটকে রাখেনি এআই। ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে মানবিক। এআই গড: অ্যালান টুরিং-এর প্রতিকৃতি তার বড় উদাহরণ।
টুরিংয়ের মুখের বিভিন্ন অংশ ভেঙেচুরে এক বিমূর্ত শিল্প তৈরি করেছে রোবট এআইডিএ। ছবিটির মূলভাব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘টুরিং কৃত্রিম মেধাকে সামলানোর ক্ষেত্রে যে সমস্যার কথা শুনিয়েছিলেন, ছবি সে সমস্যারই প্রতিফলন।’
রোবট একটি আবেগহীন যন্ত্র। অন্যদিকে শিল্পকর্ম পুরোটিই আবেগ ও কল্পনার মিশেল। আবেগহীন রোবট এআইডিএ রোবটের ইতিহাসে এই প্রথম ছবি আঁকল। তাই নিলামে তোলার সময় কেউ কল্পনাও করেনি, ঠিক টাকায় বিক্রি হতে যাচ্ছে এই চিত্রকর্ম।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে অ্যালান টুরিং সাড়া ফেলেছিলেন নাৎসিদের পাঠানো সাংকেতিক বার্তার মর্মার্থ উদ্ধার করার কারণে। এমনকি অনেকে মনে করেন, টুরিংয়ের পদ্ধতিই জার্মানি এবং তার বন্ধু দেশগুলোকে হারিয়ে দিতে সাহায্য করেছিল। তিনি ১৯৫৪ সালে সমকামী বিষয়ে ভিক্টোরিয়ান আইনে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর আত্মহত্যা করেন।
টুরিংয়ের হাত ধরে কৃত্রিম মেধার সূচনা ঘটে। তাই তাঁকে এর জনক বলা হয়। তবে তিনি কৃত্রিম মেধার অপব্যবহার করা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। সেগুলো যে একেবারে অমূলক, তা হয়তো নয়। কিন্তু টুরিংয়ের বিমূর্ত মুখাবয়ব এঁকে রোবট এআইডিএ হয়তো এটিই বুঝিয়ে দিল, সতর্ক ব্যবহারে সবকিছুই সুন্দর।
সূত্র: সিএনএন