আমাদের পরিচিত পৃথিবীকে পরিবর্তন করছে এআই। এই প্রযুক্তি বিভিন্ন শিল্পকে নতুনভাবে গঠন করছে, কাজগুলোকে সহজ করছে। তবে প্রযুক্তি খাতে নিয়োগেরও ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছে এআই। কারণ চাকরির অনলাইন সাক্ষাৎকারে এআই দিয়ে প্রতারণা করছে প্রার্থীরা। বিশেষ করে দূরবর্তী ইন্টারভিউয়ের (রিমোট ইন্টারভিউ বা অনলাইন সাক্ষাৎকারে) ক্ষেত্রে। যেমন—কোডিং দক্ষ লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে দূরবর্তী ইন্টারভিউয়ের সময় এআই ব্যবহার করছেন অনেকেই। এর ফলে আমাজন, মেটা এবং গুগলের মতো বড় কোম্পানিগুলো তাদের নিয়োগ কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছে।
প্রযুক্তি খাতে নিয়োগে ব্যাপক পরিবর্তন সৃষ্টি করছে এআই। রিমোট (দূরবর্তী) কোডিং ইন্টারভিউতে প্রতারণার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল ব্যবহার করছেন চাকরি প্রার্থীরা। পূর্বে, প্রার্থীদের সশরীরে ইন্টারভিউ নেওয়া হতো। এসব ইন্টারভিউয়ে প্রার্থীদের হোয়ার্টবোর্ডে অ্যালগোরিদমিক সমস্যা সমাধান করতে হতো তবে, রিমোট ইন্টারভিউয়ের বা অনলাইন সাক্ষাৎকারের উত্থানে প্রার্থীদের জন্য ক্যামেরার বাইরে এআই-চালিত টুল ব্যবহার করে কোড তৈরি করা, সমাধান যাচাই করা এবং সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া অনেক সহজ হয়ে গেছে। এমন প্রবণতা নিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে এবং গুগলের মতো কোম্পানিগুলো এখন নকল ছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে ইন-পারসন বা সশরীরে ইন্টারভিউয়ের দিকে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছে।
এআই মাধ্যমে প্রতারণা করার প্রবণতার বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছেন নিয়োগকারীরা। ফলে দক্ষ প্রার্থীদের খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এসব প্রতারণার কিছু সাধারণ লক্ষণ এর মধ্যে রয়েছে—ব্যাখ্যা ছাড়া নিখুঁত সমাধান, দীর্ঘ বিরতির পর নিখুঁত প্রতিক্রিয়া এবং সমস্যাগুলো বা প্রশ্নের ধরন সামান্য পরিবর্তন করলে প্রার্থীদের বিপাকে পড়ে যাওয়া।
এর ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আস্থা হ্রাস পেয়েছে। দক্ষ প্রার্থীরা সত্যতা যাচাইয়ের জটিলতার কারণে প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন। এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য কিছু বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিচ্ছেন যে, রিমোট ইন্টারভিউ পুরোপুরি পরিত্যাগ করার পরিবর্তে উন্নত শনাক্তকরণ টুল তৈরি করা, গভীর ফলোআপ-আপ প্রশ্ন করা এবং নিয়োগকারীদের উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া।
প্রতারণার এই প্রবণতা এআই-চালিত ইন্টারভিউ সহায়তার নতুন একটি বাজার তৈরি করেছে। ২১ বছর বয়সী উদ্যোক্তা চুংইন লি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এমন টুল তৈরি করছেন যা প্রার্থীদের প্রচলিত কোডিং পরীক্ষাগুলো এড়িয়ে যেতে সহায়তা করে। লি আশা করছেন, তার ব্যবসা মধ্য মে মাস নাগাদ এক মিলিয়ন ডলার আয় করবে। তিনি মনে করেন, প্রার্থীদের এআই ব্যবহার করার জন্য শাস্তি না দিয়ে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে নিয়োগ প্রক্রিয়া আধুনিক করা উচিত। কারণ, ওই কোম্পানিগুলো নিজেই এআই উন্নয়নের প্রচার করছে।
একইভাবে, একটি এআই টুল তৈরি করেছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রয় লি। এটি আমাজনের লাইভ কোডিং চ্যালেঞ্জগুলো রিয়েল-টাইমে সমাধান করতে পারে এবং এর মাধ্যমে শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোতে ইন্টার্নশিপ অফার পেয়েছেন তিনি। তার এই টুলটি ইউটিউবে প্রকাশ করার পর ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। যেখানে সমালোচকেরা তার কাজকে ‘অসৎ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে তার সমর্থকেরা দাবি করেছেন, তার এই কৌশল নিয়োগ প্রক্রিয়ার গভীর ত্রুটিগুলো উন্মোচন করেছে। অনেকেই মনে করেন, লিটকোডের মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে অ্যালগোরিদমিক সমাধান মনে রেখে যেভাবে কোডিং ইন্টারভিউ নেওয়া হয়, তা প্রকৃত ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতা এবং সৃজনশীলতা পরিমাপ করতে পারে না।
তথ্যসূত্র: উবার গিজমো