অনলাইন ডেস্ক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য রাশিয়া অনলাইনে প্রচারণা অভিযান শুরু করেছে বলে দাবি করেছে মাইক্রোসফট। গত ৪৫ দিনে এই প্রচারণা জোরাল হলেও আগের নির্বাচনের চেয়ে তা ধীর গতিতে হচ্ছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এসব তথ্য জানায়।
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এই প্রযুক্তি কোম্পানির গবেষকেরা বলেন, রাশিয়াভিত্তিক বিভিন্ন অনলাইন অ্যাকাউন্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে বিভাজনমূলক কনটেন্ট ছড়ানো হচ্ছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেও প্রচারণা চলছে।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত রুশ দূতাবাস এই বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে গত মাসে রাশিয়া বলেছে, আগামী নভেম্বরের মার্কিন নির্বাচনে তারা কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।
২০১৬ ও ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অনলাইনে প্রচারণার অভিযোগ তুলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেসব অভিযোগও অস্বীকার করেছে রাশিয়া।
মাইক্রোসফটের গবেষকেরা বলছেন, রাশিয়ার কার্যকলাপ এখনও আগের নির্বাচনগুলোর মতো তীব্র না হলেও সামনের মাসগুলোতে গতি বাড়তে পারে।
এক বিবৃতিতে মাইক্রোসফট বলেছে, প্রথাগত গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে গত দুই মাসে ইউক্রেন সম্পর্কিত বার্তাগুলোর উপর নজরদারি করে গোপনে ও প্রকাশ্যে প্রচারিত রাশিয়াভিত্তিক অন্তত ৭০টি কনটেন্ট পাওয়া গেছে।
সবচেয়ে বেশি প্রচারণার সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের যোগসাজশ মিলেছে বলে মাইক্রোসফটের গবেষকরা দাবি করেছেন।
একটি ক্ষেত্রে প্রথমে নানা ভাষায় অনলাইনে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পোস্ট করা হয়। কোনো নাগরিক সাংবাদিক বা তথ্য ফাঁসকারী ব্যক্তি অনলাইন চ্যানেলে ভিডিও পোস্ট দিয়ে এই প্রচারণা শুরু করেন। পরে ডিসি উইকলি, মিয়ামি ক্রনিকেল ও দ্য ইন্টেল ড্রপের মতো বিভিন্ন ওয়েবসাইট এসব কনটেন্ট পুনঃপ্রচার করে। কয়েক দিন বা সপ্তাহ ধরে এসব কনটেন্ট ছড়ানোর পর উৎস না জেনেই যুক্তরাষ্ট্রের মানুষও সেগুলো পোস্ট করতে থাকে।
মাইক্রোসফট বলছে, এর মধ্যে রাশিয়ার হ্যাকিং গ্রুপ স্টার ব্লিজার্ড বা কোল্ড রিভারের বেশ তোড়জোড় দেখা গেছে। পশ্চিমা থিংক ট্যাংক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্য করে এই গ্রুপ হ্যাকিং কার্যক্রম চালায়। আগামী নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও নীতি নির্ধারকদের লক্ষ্য করে প্রথম ধাপের হ্যাকিং করতে পারে স্টার ব্লিজার্ড।
বিদেশি প্রতিদ্বন্দ্বীদের দিক থেকে মার্কিন নির্বাচনকে লক্ষ্য করে ডিপফেকের মতো ক্ষতিকর উপায়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে মূলত উদ্বেগ দেখিয়ে আসছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তবে মাইক্রোসফট বলেছে, এখনও ডিপফেকের ব্যবহার ততটা জোরাল হয়নি, সাধারণ প্রযুক্তি ব্যবহার বেশি হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভুয়া ভিডিও তৈরির চেয়ে অডিও বা কণ্ঠস্বর নকল করার প্রবণতা দেখা গেছে।
গবেষকেরা বলেন, রাষ্ট্রীয় মদদে তৈরি এআইভিত্তিক কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুব বেশি প্রভাব ফেলেছে–এমন ঘটনা বিরল। এই ধরনের কনটেন্ট দ্বারা প্রকৃত পাঠক-দর্শক-শ্রোতা প্রতারিত হওয়ার অল্প কিছু ঘটনা পাওয়া গেছে। খুব সহজ কারসাজির কনটেন্টগুলোই সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করবে। এআই ব্যবহার করে তৈরি জটিল ফিচারগুলোর প্রভাব তেমনটা পড়বে না।