অনলাইন ডেস্ক
ইউটিউব ভিডিও ও সার্চ ফলাফলে ফ্যাক্ট চেকিং ফিচার যুক্ত করবে না বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) অবহিত করল টেক জায়ান্ট গুগল। ইইউর নতুন আইন অনুসারে এ ধরনের প্ল্যাটফর্মে ফ্যাক্ট চেকিং ফিচার যোগ করা বাধ্যতামূলক হলেও এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করবে না কোম্পানিটি। গত বৃহস্পতিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘অ্যাকসিওস’–এর প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
অ্যাকসিওসের প্রতিবেদনে ইউরোপীয় কমিশনের কনটেন্ট ও টেকনোলজি বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল রেনাতে নিকোলাইয়ের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন গুগলের প্রতিনিধি। এই চিঠিতে গুগল তাদের বর্তমান কনটেন্ট মডারেশন নীতির সঙ্গে আরও কোনো ফ্যাক্ট চেকিং ইন্টিগ্রেশন যুক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেনি।
২০২২ সালে একটি ‘কোড অব প্র্যাকটিস’ বা ‘ব্যবহারবিধি’ চালু করে ইউরোপীয় কমিশন, যা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন ও বিজ্ঞাপন শিল্পকে মিথ্যা তথ্য, প্রোপাগান্ডা এবং অন্যান্য ভুল দাবির বিরুদ্ধে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা প্রদান করে। এই বিধি প্রথমে ২০১৮ সালে প্রবর্তিত হয়েছিল।
উল্লেখ্য, গুগল কখনোই তার কনটেন্ট মডারেশন নীতিতে ফ্যাক্ট চেকিং ফিচার যোগ করেনি।
গুগলের বৈশ্বিক সম্পর্কবিষয়ক প্রধান কেন্ট ওয়াকার বলেন, ‘ফ্যাক্ট চেকিং ইন্টিগ্রেশন, যা ইউরোপীয় কমিশনের ডিজইনফরমেশন কোড অব প্র্যাকটিসে উল্লেখ করা হয়েছে, আমাদের সেবার জন্য উপযুক্ত বা কার্যকর নয়।’
গুগলের ইউরোপীয় ফ্যাক্ট চেকিং আইন বিষয়ে অবস্থান আরও সুস্পষ্ট করতে কোম্পানির বিদ্যমান কনটেন্ট মডারেশন নীতির প্রতি ইঙ্গিত করেন ওয়াকার। তিনি এই নীতিকেই যথেষ্ট হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং তার দাবির সমর্থনে গত বছর সারা বিশ্বে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচনের উদাহরণ তুলে ধরেন।
তিনি আরও জানান, গুগল তার বর্তমান কনটেন্ট মডারেশন নীতির উন্নতির জন্য বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে এবং এটি নির্বাচনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
ইউরোপীয় কমিশন হচ্ছে ইইউর নির্বাহী প্রতিষ্ঠান। ইইউর নীতি এবং আইনগুলো সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করে এই কমিশন। এ ছাড়া, এটি ইইউর পক্ষে আন্তর্জাতিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা করে।
এক সপ্তাহ আগেই মেটার প্রধান মার্ক জাকারবার্গ বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেটা আইন শুধু বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তার ফ্যাক্ট চেকিং নিয়মাবলি মেনে চলতে এবং আপত্তিকর কনটেন্ট সরিয়ে ফেলতে বাধ্য করে। তবে এর আগেই মেটা ঘোষণা করেছে, তারা তাদের প্রধান প্ল্যাটফর্মে (ফেসবুক) ফ্যাক্ট চেকিং এবং বক্তৃতার ওপর নিয়ন্ত্রণ কমাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘ইউরোপে আইনগুলোর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে, যা সেন্সরশিপ প্রতিষ্ঠিত করছে এবং সেখানে নতুন কিছু উদ্ভাবন কঠিন করে তুলছে।’
গত সপ্তাহে মেটা ঘোষণা করেছে যে তারা ফ্যাক্ট চেকিংয়ের প্রচেষ্টা বন্ধ করবে এবং ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, থ্রেডসসহ প্রধান প্ল্যাটফর্মগুলোর পোস্টের ওপর নিয়ন্ত্রণ কমিয়ে দেবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেটা আইন অনুযায়ী, কোডটি গুগলকে তার সার্চ রেজাল্ট ও ইউটিউব ভিডিওর সঙ্গে ফ্যাক্ট চেক রেজাল্ট অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য করে। এ ছাড়া, গুগলকে তার র্যাঙ্কিং সিস্টেম এবং অ্যালগরিদমে ফ্যাক্ট চেকিং ফিচার যোগ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
করোনা-১৯ মহামারি চলাকালে অনলাইনে মিথ্যা খবর, ভুল স্বাস্থ্য তথ্য এবং বিভিন্ন ষড়যন্ত্রতত্ত্বের কারণে জীবনহানির মতো ঘটনা ঘটে। এসব কারণে (ডিএসএ) ২০২২ সালে ইউরোপীয় কমিশন ‘ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট’ জারি করে।