প্রযুক্তি ডেস্ক
বিশ্ববিখ্যাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজন চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ৩২০ কোটি ডলার মুনাফা করেছে। আগের বছরের একই সময়ে উল্টো ৩৮০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছিল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক মাসে দুই দফা কর্মী ছাঁটাইসহ খরচ কমানোর জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় বড় মুনাফা হয়েছে আমাজনের। প্রথম ত্রৈমাসিকে যতটা মুনাফা হবে বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করেছিলেন, সেটাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে আমাজনের রাজস্ব আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আশা করছে, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে আগের বছরের একই সময়ের থেকে ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ বিক্রি বাড়বে। ডলারের হিসেবে বাড়বে ১২৭ কোটি থেকে ১৩৩ কোটির বিক্রয়।
ইনভেস্টিং ডটকমের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক জেসি কোহেন বলেছেন, ‘ফলাফলগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে আমাজনের খরচ কমানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর ফলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক সম্ভাবনার ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পরবর্তী ত্রৈমাসিকের জন্য প্রতিষ্ঠানটির দৃঢ় নির্দেশিকা ইঙ্গিত দেয় যে, এটি খারাপ সময় থেকে বেড়িয়ে আসবে।’
আমাজনের লাভে অন্যতম অবদান রাখা আমাজন ওয়েব সার্ভিসের মুনাফার শতাংশীয় হারও দুই অংকে পৌঁছেছে। আমাজন ওয়েব সার্ভিসেসের বিক্রয় আগের বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেড়ে ২১৪ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
খরচ কমানোর অংশ হিসেবে সম্প্রতি নিজের গ্লোবাল অনলাইন বুক স্টোর ‘বুক ডিপোজিটরি’ বন্ধ করেছে আমাজন। গত ২৬ এপ্রিল থেকে এটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে ওই দিন দুপুর পর্যন্ত গ্রাহকেরা অর্ডার দিতে পেরেছেন।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্ল্যাটফর্মটি আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত গ্রাহকদের অর্ডারগুলোর বিষয়ে সহায়তা প্রদানে সক্রিয় থাকবে। ২০০৪ সালে আমাজনের এই অনলাইন বুক স্টোর ‘বুক ডিপোজিটরি’ চালু হয়। আমাজনের প্রাক্তন কর্মচারী স্টুয়ার্ট ফেলটন ও অ্যান্ড্রু ক্রাউফোর্ড প্ল্যাটফর্মটি চালু করেছিলেন। ২০১১ সালের ২৬ এপ্রিল প্ল্যাটফর্মটিকে কিনে নেয় আমাজন। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, এটি ১২০টিরও বেশি দেশে ২ কোটিরও বেশি বই বিক্রি করেছে। সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে ডেলিভারি পরিষেবা প্রদান করত প্ল্যাটফর্মটি।
প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় ব্যবস্থাপনার বিভাগীয় প্রধান অ্যান্ডি চার্ট বলেন, ‘আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমরা ধীরে ধীরে প্ল্যাটফর্মটি বন্ধের দিকে এগোব। এর মধ্যে আমাদের ওয়েবসাইট বন্ধের মতো পদক্ষেপও রয়েছে।’ চার্ট তার সমস্ত বইপ্রেমী গ্রাহককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, গ্রাহকেরাই এই প্ল্যাটফর্মকে সারা বিশ্বের পাঠকদের কাছে মুদ্রিত বই আরও সহজলভ্য করে তুলতে সক্ষম করেছেন।
এর আগে গত মাসে আবারও ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটে আমাজন। ছাঁটাই করা হয়েছে ৯ হাজার কর্মী। মূলত খরচ কমানোর লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত জানুয়ারিতে ১৮ হাজার কর্মী ছাঁটাই করে প্রতিষ্ঠানটি।
আমাজনের প্রধান নির্বাহী অ্যান্ডি জ্যাসি বলেছিলেন, ‘কঠিন হলেও দীর্ঘ মেয়াদে এই সিদ্ধান্ত কোম্পানির জন্য সুফল বয়ে আনবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাজনের ব্যবসার বেশির ভাগ জায়গাতেই বিভিন্ন নতুন পদ যুক্ত হয়েছে।’
করোনা মহামারির সময় অনলাইন শপিংয়ের প্রতি মানুষ পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় আমাজনের রেকর্ড পরিমাণ আয় হয়। করোনার বিধিনিষেধের পর থেকে মানুষ আবার অফলাইন শপিংয়ে অভ্যস্ত হওয়ায় প্রবৃদ্ধি কমে যায় আমাজনের। পণ্যের বিক্রি কমে যাওয়া, ঊর্ধ্বমুখী মূল্য এবং সুদের হার বৃদ্ধির ফলে আমাজনের শেয়ারে দরপতন ঘটে প্রায় ৫০ শতাংশ।