অনলাইন ডেস্ক
পেমেন্ট গেটওয়ে, বৈদ্যুতিক গাড়ি, রকেট–অনেক ব্যবসাই তো হলো, এবার বিজ্ঞাপনের ব্যবসায় নামছেন ইলন মাস্ক! তাও আবার মহাকাশে! জিওমেট্রিক এনার্জি করপোরেশন (জিইসি) নামে একটি কানাডীয় স্টার্টআপ এরই মধ্যে স্পেসএক্সের সঙ্গে এ ব্যাপারে চুক্তি করেছে।
জিইসির সহ-প্রতিষ্ঠাতা সিইও স্যামুয়েল রিডের বরাত দিয়ে বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিউবস্যাট নামে একটি স্যাটেলাইট তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। স্যাটেলাইটের এক পাশে একটি পিক্সেলেটেড ডিসপ্লে স্ক্রিন থাকবে, যেখানে টাকার বিনিময়ে বিজ্ঞাপন, লোগো এবং শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হবে।
কিউবস্যাট কৃত্রিম উপগ্রহটি স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে জিইসি। এই রকেট চাঁদে পৌঁছানোর আগে স্যাটেলাইটি কক্ষপথে স্থাপন করবে।
কক্ষপথে স্থাপিত হওয়ার পর কিউবস্যাটের ডিসপ্লেতে দেখানো হবে বিজ্ঞাপন। একটি সেলফি স্টিক ডিসপ্লের ভিডিও রেকর্ড ও স্ট্রিম করবে। সেই ফুটেজ ইউটিউবে লাইভ স্ট্রিম করা হবে অথবা ভিডিও গেমস স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম টুইচ থেকেও যে কেউ সেটি দেখতে পারবেন।
কিউবস্যাটটি ২০২২ সালের প্রথম দিকে উৎক্ষেপণ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন রিড।
কিউবস্যাটে বিজ্ঞাপন দিতে, ডিসপ্লে স্ক্রিনে নির্দিষ্ট পরিমাণ পিক্সেল কিনতে এবং বিজ্ঞাপন ডিজাইন করতে আগে থেকে টোকেন কিনতে হবে। আর এই টোকেন কেনা যাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি ইথেরিয়াম দিয়ে। পরবর্তীতে ডজকয়েনও এতে যুক্ত হতে পারে।
যে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিজ্ঞাপনদাতা, শিল্পী এবং আগ্রহী যে কেউ কিউবস্যাটের ডিসপ্লে স্ক্রিনে বিজ্ঞাপন দেখাতে পারবেন।
তবে প্রতিটি টোকেনের মূল্য কতো হতে পারে সে ব্যাপারে জিইসির কেউ মুখ খুলছেন না।
রিড জানান, ২০১৮ সালেই মহাকাশে বিজ্ঞাপনের প্রস্তাব নিয়ে স্পেসএক্সে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তখন সাড়া পাননি। জিইসিকে গুরুত্ব সহকারে নিতে স্পেসএক্সের কিছুটা সময় লেগেছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার স্পেসএক্সের কার্যালয়ে ইলন মাস্কের তৈরি স্কুল ‘অ্যাড অ্যাস্ট্রা’তে কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন রিড। সেখানে তিনি মাস্কের সন্তানদের পড়িয়েছেন। ওই সময়ই মূলত মাস্কের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন তিনি। অবশ্য মাস্কের সঙ্গে সরাসরি কখনো দেখা হয়নি রিডের। এই প্রকল্প নিয়ে এবার মুখোমুখি বসে কথা বলার সুযোগ হবে বলে আশা করছেন রিড।
মহাকাশে বিজ্ঞাপন দেখানো ধারণাটি অবশ্য নতুন নয়। ১৯৯০–এর দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মহাকাশ দখলের প্রতিযোগিতা থেমে যায়। এরপর মহাকাশ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ শুরু করে বেসরকারি কোম্পানিগুলো। ফলে মহাকাশ প্রযুক্তি আরও সহজলভ্য হয়ে ওঠে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিপণনের হাতিয়ার হিসেবে আগ্রহের বিষয় হয়ে ওঠে মহাকাশ। এরপর থেকে মহাকাশ বিজ্ঞাপনে বহু চেষ্টা চালানো হয়েছে। এমনকি মহাকাশে বিশাল বিলবোর্ড স্থাপনের প্রস্তাবও করেছেন অনেকে। আবার রকেট এবং স্যাটেলাইটের গায়ে কোম্পানির লোগো বসানোর কথাও ভাবা হয়েছে। ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স কক্ষপথে টেসলা গাড়ি পাঠিয়েছে।
মহাকাশে বিজ্ঞাপনের বড় সুবিধা হলো– এক সঙ্গে বহু দেশের কোটি কোটি মানুষ একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পারবে। অবশ্য এতে মহাকাশে জঞ্জাল বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা ভেবে সব সময়ই এমন উদ্যোগের সমালোচনা হয়েছে।