ভিয়েতনামে নতুন ইন্টারনেট আইন কার্যকর করেছে দেশটির সরকার। আইনটি ‘ডিক্রি ১৪৭’ নামে পরিচিত। নতুন আইন অনুযায়ী, ফেসবুক ও টিকটকসহ সব প্রযুক্তি কোম্পানিকে ব্যবহারকারীদের পরিচয় যাচাই করতে হবে এবং তাদের তথ্য সরকারকে সরবরাহ করতে হবে। গত বুধবার থেকে আইনটি কার্যকর হয়। আইনটিকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সমালোচকেরা।
এই আইনে বলা হয়েছে, ভিয়েতনামে কার্যরত সব প্রযুক্তি কোম্পানিকে ব্যবহারকারীদের ফোন নম্বর অথবা ভিয়েতনামের পরিচয়পত্রের মাধ্যমে তাদের অ্যাকাউন্ট যাচাই করতে হবে এবং সেই তথ্যে তাদের পূর্ণ নাম ও জন্ম তারিখ থাকতে হবে। চাওয়ামাত্রই ভিয়েতনামের সরকারের কাছে এসব তথ্য সরবরাহ করতে হবে। সেই সঙ্গে, যেসব বিষয়বস্তু সরকার ‘অবৈধ’ বলে মনে করবে, তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে ফেলতে হবে।
ভিয়েতনামের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া ভিএনএক্সপ্রেস জানিয়েছে, ‘সব সোশ্যাল মিডিয়া সাইটকে ৯০ দিনের মধ্যে ‘ভিয়েতনাম থেকে প্রতিদিন সাইটগুলোতে প্রবেশের মোট সংখ্যা এবং প্রতি মাসে সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
ফেসবুক অ্যাকাউন্টে রাজনীতি এবং সামাজিক বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেন ভিয়েতনামের সমাজকর্মী ডাং থি হুয়ে। তাঁর অ্যাকাউন্টে ২৮ হাজার ফলোয়ার রয়েছে। নতুন আইনটি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ডিক্রি ১৪৭ বিভিন্ন মতামতের মানুষদের প্রকাশ্যে দমন করার জন্য ব্যবহৃত হবে।’
সাবেক রাজনৈতিক বন্দী লে আং হুং বলেন, মৌলিক স্বাধীনতার ওপর আক্রমণের সর্বশেষ লক্ষণ হলো এই ডিক্রি। যেখানে ‘বৈধ’ ও ‘অবৈধ’–এর মধ্যে স্পষ্ট সীমারেখা নেই। কেউই জেলে যেতে চায় না, তাই অবশ্যই কিছু সমাজকর্মী এই ডিক্রির কারণে আরও সতর্ক হবে এবং ভয়ে থাকবে।
ভিয়েতনামের কঠোর প্রশাসন সাধারণত বিরোধী মত দমন এবং সমালোচকদের গ্রেপ্তার করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। বিশেষত যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের মতামত প্রকাশ করেন এবং একটি শ্রোতা তৈরি করেন।
রাষ্ট্রবিরোধী তথ্য প্রকাশের অভিযোগে গত অক্টোবরে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় ব্লগার ডুং ভান থাইকে। তিনি ইউটিউবে নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে নিয়মিত লাইভ স্ট্রিম করতেন। তার প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ফলোয়ার রয়েছে।
২০১৮ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইনের ওপর ভিত্তি করে ডিক্রি ১৪৭ তৈরি হয়েছে। এই সাইবার নিরাপত্তা আইন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইন্টারনেট স্বাধীনতা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিল। তারা বলেছিল, এটি চীনের দমনমূলক ইন্টারনেট সেন্সরশিপের অনুকরণ।
এই ডিক্রি আরও বলেছে যে, শুধু যাচাই করা অ্যাকাউন্টগুলোই লাইভ স্ট্রিম করতে পারবে। টিকটকসহ সোশ্যাল কমার্সের মাধ্যমে জীবিকা অর্জনকারী মানুষের ওপর প্রভাব ফেলবে।
সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর ওপর সীমা আরোপ করা ছাড়াও নতুন আইনে ১৮ বছরের নিচে শিশুদের জন্য গেমিংয়ে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। আসক্তি প্রতিরোধের জন্য এমন নিয়ম করা হয়েছে।
গেম ডেভেলপারদের বলা হচ্ছে, তাদের প্রতি গেম সেশনে এক ঘণ্টার সময়সীমা এবং প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১৮০ মিনিট গেম খেলার সীমা আরোপ করতে হবে।
ডেটা গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিউজু অনুযায়ী, ভিয়েতনামের ১ কোটি জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি নিয়মিত গেম খেলে।
ভিয়েতনামের একটি বড় অংশ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। দেশটির তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন ফেসবুক ব্যবহারকারী, ৬০ মিলিয়ন ইউটিউব এবং ২০ মিলিয়ন টিকটক ব্যবহারকারী রয়েছে।
তথ্যসূত্র: জাপান টুডে