ট্রেন রেললাইনের ওপর দিয়ে চলে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু হঠাৎ যদি দেখেন একটি ট্রেন উল্টোভাবে রেললাইনের নিচ দিয়ে চলছে, তাহলে নিশ্চয় চোখ কপালে উঠবে! তবে সত্যি এ ধরনের ট্রেন আছে। এর দেখা পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে জার্মানির উত্তর রাইন রাজ্যের শহর উপেরতালে। এখানকার সোয়েবেবান রেলওয়েতে দেখা পাবেন এমন আশ্চর্য ট্রেনের।
এ ধরনের রেলওয়ে পরিচিত ঝুলন্ত বা সাসপেনশন রেলওয়ে নামে। পাইলন বা খুঁটির সঙ্গে ঝুলতে থাকা রেল ট্র্যাকের নিচ দিয়ে ঝুলতে ঝুলতে চলে যায়। রাস্তা, ঘর-বাড়ি, নদীসহ নানা ধরনের প্রতিবন্ধকের ওপর দিয়ে ছুটে যায় ট্রেনের বগিগুলো। এদিকে যাত্রীরা মনের আনন্দে উপভোগ করে নিচের অসাধারণ দৃশ্য।
অর্থাৎ, উল্টো বলা হলেও আসলে কিন্তু মোটেই উল্টে থাকে না বগিগুলো। বরং রেল ট্র্যাকের নিচে দিয়ে ঝুলে যাওয়ায় এমনটা মনে হয়। আমাদের যেমন মাথা ওপরের দিকে থাকে, তেমনি এই ট্রেনের যাত্রীরা কিংবা চালক স্বাভাবিকভাবেই বসে থাকেন। অর্থাৎ উল্টোভাবে ঝুলতে হয় না।
এবার বরং কীভাবে এমন আশ্চর্য রেলপথের জন্ম তা জেনে নিই। এখানকার লম্বা, এঁকেবেঁকে যাওয়া নদী তীরের উপত্যকার কারণে সাধারণ রেলযোগাযোগ ছিল কঠিন। শহরের কর্মকর্তারা সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন প্রস্তাব চান। উদ্যোক্তা ও প্রকৌশলী ইউজেন ল্যাংগেন তাঁর চিনিকলে কাঁচামাল পৌঁছাতে এমন ঝুলন্ত রেলওয়ে ব্যবহার করতেন। ১৮৯৩ সালে প্রস্তাবটি দেওয়ার পর এটিই পছন্দ হয় কর্তৃপক্ষের। সোয়েবেবান রেলওয়ের নির্মাণ শুরু হয় ১৮৯৮ সালে।
ঝুলন্ত এই রেল ট্র্যাক তৈরি করতে লাগে ২০ হাজার টন ইস্পাত। কাঠ ও কাচ দিয়ে ভেতরের অংশ সাজানো প্রতিটি বগি ৬৫ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারে। রেল ট্র্যাক কিছুটা বিস্তৃত হয়ে এখনকার পর্যায়ে পৌঁছায় ১৯০৩ সালে। এই দৈর্ঘ্য ১৩.৩ কিলোমিটার বা ৮.৩ মাইল। গোড়া থেকেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় রেল ট্র্যাকটি।
রেলওয়ে আর এর ট্রেনগুলো শহরের বাসিন্দাদের ভারি প্রিয়। ‘আমি মনে করি না উপেরতালে ও বারম্যানের পরিচয় ফুটিয়ে তোলার জন্য সোয়েবেবানের চেয়ে উপযোগী আর কিছু আছে।’ সিএনএনকে বলেন স্থানীয় বাসিন্দা রোজমেরি ওয়েইনগার্তেন, ‘এটা সব সময়ই এখনে আছে আমার জন্য। আর আমি গর্বিত এটি এখনো চলছে।’
রেলওয়েটি শহরবাসীর পাশাপাশি পর্যটকদেরও পছন্দ। উপেরতালেতে ভ্রমণ করলে কোনোভাবেই এতে ভ্রমণের সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। সার্ভিসে মূল বগিগুলোর একটি এখনো আছে। এটাই ১৯০০ সালে জার্মান সম্রাট দ্বিতীয় উইলহেম ও সম্রাজ্ঞী অগুস্তে ভিক্টোরিয়া ভ্রমণ করেন। কাইজারওয়াগন বা ইমপেরিয়াল ক্যারিজ নামে পরিচিত বগিটি বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভাড়া করা যায়।
সূত্র: সিএনএন, ট্রাভেল অ্যান্ড লেইজার ডট কম