বিরল আর্টেরিয়াল টোর্টোসিটি সিন্ড্রোমের কারণে দৃষ্টিশক্তি ছাড়াই জন্ম হয় আমজাদ আল-মুতাইরির। অন্য শিশুদের মতো তিনি পৃথিবীর সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারেননি। সৌদি আরবের সেই মেয়েটিই আজ হয়ে উঠেছেন একজন আলোকচিত্রী। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
২০ বছর বয়সী মুতাইরি গর্ভে সাত মাস থাকার পর জন্মেছিলেন, এতে তার চোখ কিছুটা তির্যক হয়। এ নিয়ে স্কুলে হেয়-প্রতিপন্নও হয়েছেন তিনি। তবে এসবের কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে। এখন অন্য সব আলোকচিত্রীদের মতো তিনিও ক্যামেরাবন্দি করেন অসাধারণ সব দৃশ্য।
গত সোমবারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জন্মের পর আমজাদ আল-মুতাইরি অতি বিরল আর্টেরিয়াল টোর্টোসিটি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হন। বিরল এ রোগের কারণে শরীরের ধমনিতে নানা সমস্যা হয়। যার কারণে জীবনহানিকর বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এ ছাড়া চোখের সমস্যা নিয়েও জন্মান তিনি। তার বাম চোখটি পুরোপুরি অন্ধ। অপর দিকে ডান চোখে খুবই অস্পষ্ট বা বলতে গেলে দেখতেই পান না তিনি।
তখন তাঁর মাথায় আসে—এমন একটি ক্যামেরার উদ্ভাবন করবেন যেটি দিয়ে দৃষ্টিহীনরা ছবি তুলতে পারবেন এবং এতে ভয়েস আউটপুট থাকবে। যদিও এখনো এ ক্যামেরাটি আলোর মুখ দেখেনি। তবে এই ধারণা নিয়ে কাজ করার জন্য রিয়াদের মাজামাহ গভার্নারেট আয়োজিত ট্যালেন্ট-ক্রিয়েটিভিটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
এখন সাধারণ ক্যামেরা দিয়েই ছবি তোলেন তিনি। ছবি তোলা এবং ছবিগুলো দেখতে কেমন হয়েছে সেটি বুঝতে দৃষ্টিহীনদের জন্য তৈরি কয়েকটি প্রোগ্রাম ব্যবহার করেন মুতাইরির। ওই প্রোগ্রামগুলো ছবিগুলোর কথা উচ্চারণ করে শোনায় এবং বর্ণনা করে।
মুতাইরির বলেন, ‘আমি ফটোগ্রাফি শিখেছি প্রোগ্রামের সহায়তা নিয়ে, যেটি ছবির বর্ণনা উচ্চারণ করে বলে। এ ছাড়া আমার নিজস্ব সৃজনশীল ও শৈল্পিক অনুভূতি আছে যার মাধ্যমে আমি ছবি বুঝতে পারি।’
মুতাইরির বলেন, জন্মগত ত্রুটি কারও লুকিয়ে রাখা উচিত নয়, বরং বাকি মানুষের মতোই তাদের জীবনযাপন করা উচিত। কারণ প্রকৃত সৌন্দর্য মানুষের হৃদয়ে, চেহারায় নয়।
ভবিষ্যতে মুতাইরির মডেল হতে চান। মানুষের কোনো ইচ্ছাই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কাছে হার মানতে পারে না—সেটি প্রমাণ করতেই তিনি মডেল হতে চান বলেও জানান।