গল্পটি এমন এক শহরের, যেখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ছোট ছোট উড়োজাহাজ বা প্লেন আছে। গাড়ির গ্যারেজ যেমন আমাদের কাছে এখন খুব পরিচিত একটি বিষয়, ওই শহরে উড়োজাহাজের হ্যাঙ্গারও তেমনি। সেখানে এমনকি গাড়ির পাশাপাশি রাস্তায় দেখা পাবেন উড়োজাহাজেরও।
শুনতে যতই অস্বাভাবিক লাগুক, এমন শহর বা বসতি সত্যি আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ওই এলাকার নাম ক্যামেরন এয়ারপার্ক স্টেটস। এখানে প্রত্যেকেই তাঁদের বাড়ির সামনেই উড়োজাহাজে চেপে চলে আসতে পারেন। যেখানে যেতে চান, নিজের ব্যক্তিগত ছোট্ট প্লেনটায় চেপে বসলেই হলো। এই আজব শহরের ছবি ও ভিডিও অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ আলোড়ন তুলেছে।
মজার ঘটনা, শহরটির নকশাই করা হয়েছে পাইলটদের কথা ভেবে। একটি বিমানবন্দর ঘিরেই গড়ে তোলা হয়েছে শহরটি। যেন পাইলটেরা সেখান থেকে সহজে বাড়িতে আসতে এবং বাড়ি থেকে কোথাও যেতে পারেন। তাঁদের বাড়িতে গ্যারেজ যদি না-ও থাকে, উড়োজাহাজ রাখার হ্যাঙ্গার ঠিকই আছে। অফিসে কিংবা বেড়াতে গেলে তাঁদের বড় ভরসা এই উড়োজাহাজ।
পৃথিবীতে এ ধরনের কয়েক শ এয়ারপার্ক থাকলেও ক্যামেরন এয়ারপার্ক এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাড়া জাগিয়েছে। যদ্দুর জানা যায়, ১৯৬৩ সালে গড়ে ওঠা এই শহরে ১২৪টি বাড়ি আছে।
তাই ওই শহরে গেলে গাড়ি আর উড়োজাহাজকে রাস্তায় পাশাপাশি চলতে দেখলে চোখ কচলানোর কোনো কারণ নেই। এটাই সেখানকার অতি স্বাভাবিক চিত্র।
এই আজব শহরের আরেকটি মজার ব্যাপার হলো, এখানকার রাস্তার সাইন ও ডাকবাক্সগুলো বেশ নিচু করে বানানো, সেটা এমনকি তিন ফুটের নিচে। এর কারণ হলো উড়োজাহাজের ডানার সঙ্গে যেন এগুলোর সংঘর্ষ না হয়। রাস্তার নামগুলো উড়োজাহাজের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সম্পর্কযুক্ত। যেমন বোয়িং রোড, সেসানা ড্রাইভ ইত্যাদি। এখানকার বাসিন্দাদের কাছে রিমোট থাকে, যেটা দিয়ে বৈদ্যুতিক গেট খুলে বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে পারেন তাঁরা।
স্বাভাবিকভাবেই উড়োজাহাজপ্রেমীদের আবাসস্থল এই শহর। ২০০৩ সালে বে এরিয়া থেকে ক্যামেরন এয়ারপার্ক এস্টেটসে ঘাঁটি গাড়েন বার্ল স্ক্যাগস। একটা কারণ, এখানকার বাড়ির দাম তখন বেশ কম ছিল, তবে আসল কারণ তাঁর একটা ব্যক্তিগত প্লেন আছে আর ক্যামেরনের প্রতিটি বাড়ির সঙ্গেই বড়সড় হ্যাঙ্গার আছে। চাকরি থেকে অবসর নেওয়া পর্যন্ত পরের সাত বছর এই প্রকৌশলী পালো আল্টোতে নিজের কর্মস্থলে যেতেন উড়োজাহাজে। এভাবে যানজটে আটকা না পড়ায় প্রতিদিন বেশ কতকটা সময় বাঁচিয়ে ফেলতে পারতেন।
‘আড়াই-তিন ঘণ্টা গাড়ি চালানোর বদলে ৩৫-৪০ মিনিটেই উড়োজাহাজে দূরত্ব অতিক্রম করতে পারতাম,’ স্ক্যাগস বলেন, ‘এখন আর কর্মস্থলে যেতে না হলেও এখনো একটি প্লেন আছে আমার।’
ক্যালিফোর্নিয়ার মধ্যে একটি বিশেষ জেলা এই ক্যামেরন এয়ারপার্ক স্টেটস। পাঁচ সদস্যের নির্বাচিত একটি বোর্ড এটি পরিচালনা করেন। এখানে যেসব মানুষের বাস, তাঁদের বেশির ভাগই পাইলট। তাঁরা নিজেরাই নিজেদের প্লেন চালান। শনিবার সকালে এখানকার অধিবাসীরা একত্র হয়ে স্থানীয় এয়ারপোর্টে যান।
জুলিয়া ক্লার্কের বাসও এই শহরে। তিনি আকাশে উড়োজাহাজ নিয়ে নানা কৌশল দেখাতেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী বাণিজ্যিক পাইলটদের একজন তিনি। ১৯৮৩ সাল থেকে এখানে বাস তাঁর।
তিনি জানান, এই শহরের বাসিন্দারা একে অপরের খুব কাছের। একজন আরেকজনকে ভালোভাবে জানেন। এমনকি নিজের নষ্ট হয়ে যাওয়া উড়োজাহাজটিকেও জুলিয়া মেরামত করে কাজে লাগান। নিজের অনেক কাজই সেখানে করেন। ‘আমার কাজগুলো উড়োজাহাজের ভেতরেই করি।’
কাজেই পাঠক মার্কিন মুল্লুকে ভ্রমণে গেলে এমন একটি শহরে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না আশা করি। বলা যায় না, কথা বলার পর ভালো লেগে গেলে এখানকার কোনো বাসিন্দা ছোট্ট একটি উড়োজাহাজ ভ্রমণে সঙ্গীও করে নিতে পারে আপনাকে।
সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, টাইমস অব ইন্ডিয়া, পিপা নিউজ,