জেন সুয়ে তাঁর দুই বছর বয়স্ক সাময়েড কুকুর ‘ওকে’কে প্রথম কাজে পাঠান সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝির দিকে। কুকুরটির চাকরিদাতা দক্ষিণ চীনের ফুজওয়ের একটি ডগ ক্যাফে।
‘আমার কাছে এটা মা-বাবারা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর মতো একটি বিষয়।’ ২৭ বছর বয়স্ক পিএইচডি শিক্ষার্থী জেন সুয়ে কুকুরটিকে নতুন খণ্ডকালীন চাকরির প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দিয়ে বলেন সিএনএনকে।
সুয়ে চাচ্ছিলেন একটু বৈচিত্র্য আসুক কুকুরটার জীবনে। কারণ ছুটির দিনে তিনি এবং তাঁর স্বামী সাধারণত ঘরে থাকেন না।
‘ওকে’কে রেস্তোরাঁয় পৌঁছে দেওয়াটা সব দিক থেকেই লাভজনক। অন্য কুকুরদের সঙ্গে খেলাধুলার সুযোগ পাওয়ায় একাকিত্ব অনুভব করে না সে।’ বলেন তিনি।
পোষা প্রাণীর এ ধরনের রেস্তোরাঁ অর্থাৎ পেট ক্যাফে চীনে এখন একটি বড় ব্যবসা। দর্শনার্থীরা দোকানে ঘুরে বেড়ানো প্রাণীগুলোর সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। ফলে রেস্তোরাঁর মালিক এ বাবদ বাড়তি অর্থ আদায় করতে পারেন তাঁদের থেকে। সাধারণত চীনের ক্যাট বা ডগ ক্যাফেতে আসা দর্শনার্থীদের প্রবেশ ফি হিসেবে ৩০-৬০ ইউয়ান (চার থেকে সাড়ে ৪ ডলার) গুনতে হয়। কখনো আবার কোনো ফি নেওয়া হয় না, তবে রেস্তোরাঁর কোনো খাবার অর্ডার করতে হয়।
সুয়ে জানিয়েছেন, ওকের এ চাকরি তাঁদের অর্থও সাশ্রয় করে। কুকুরটিকে বাড়িতে রেখে গেলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করে যেতে হতো। যা বেশ খরুচে।
‘ফুজওতে গ্রীষ্মকালটা রীতিমতো ভয়ংকর।’ বলেন তিনি। তবে চীনে ‘জলখাবারের অর্থ রোজগার’ নামে পরিচয় পাওয়া এ বিষয়টি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
সুয়ের পোষা প্রাণী বিষয়ক ভাবনাটা আপনার পছন্দ নাও হতে পারে। কিন্তু এক হিসেবে কিন্তু এই পোষা প্রাণীরা কাজই করছে। কোনোটি খণ্ডকালীন কোনোটা পূর্ণকালীন। কাজ শেষে রাতে পরিবারের কাছে ফিরেও আসছে, আমরা মানুষেরা যেমনটা করি।
সাম্প্রতিক মাসগুলিতে ইনস্টাগ্রামের চীনা বিকল্প চওহওসুতে ক্যাফে মালিকদের নিয়োগের বিজ্ঞাপন এবং পোষা প্রাণীর মালিকদের সিভি পোস্ট করতে দেখা গেছে।
একটি ভাইরাল পোস্টের শিরোনাম ছিল, ‘একটি ক্যাট ক্যাফেতে কাজ করার বেতন কত?’ রেস্তোরাঁর মালিক লিখেন, ‘অনেক লোক বলেন যে তারা তাদের বিড়ালদের আমাদের ক্যাফেতে কাজ করতে পাঠাতে চান, যদি তা-ই হয় তবে আমাকে আমাদের ক্যাফের বেতন সম্পর্কে জানানোর সুযোগ দিন। যেমন আমরা আমাদের কিছু পুরোনো কর্মচারীদের বেতন দিয়েছি।’
মজাদার এই পোস্টটি কয়েক শ লাইক পরে। পোস্টে জানানো হয় দাতৌ নামের একটি ধূসর-সাদা বিড়াল কর পরিশোধের পর পাঁচ ক্যান খাবার পায় মজুরি হিসেবে।
‘বিড়াল চাকুরে প্রয়োজন’ এমন শিরোনামে অপর এক রেস্তোরাঁ মালিক পোস্ট করেন। এতে ছয় শ কমেন্ট পড়ে।
‘আমরা সুস্থ, ভালো মেজাজের বিড়াল খুঁজছি। প্রতিদিন হালকা খাবার দেব। এ ছাড়া পোষা প্রাণীর মালিকের বন্ধুদের জন্য ৩০ শতাংশ ছাড় দিই।’
সুয়ে জানান, এ ধরনের কিছু পোস্টে চোখ আটকায় তার। তখনই ওকে’কে কাজে পাঠানোর চিন্তা মাথায় আসে। তারপরই ফুজওয়েতে ‘ইয়েসংওই’ নামের এমন একটি রেস্তোরাঁর খোঁজ পান। এর মালিককে মেসেজ পাঠান নিজের আগ্রহের কথা জানিয়ে। তারপর চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য ওকে’কে প্রস্তুত করতে থাকেন।
‘ক্যাফের মালিক প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ওকে’কে পর্যবেক্ষণ করে। উদ্দেশ্য সে গ্রাহকদের সঙ্গে ঠিক ব্যবহার করছে কিনা এবং অন্য চারটি কুকুরের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে কিনা তা বোঝা।’ সুয়ে বলেন সিএনএনকে।
নিঃসন্দেহ মালিক সন্তুষ্ট হন। কারণ কুকুরটি চাকরিটা পায়।
সুয়ে বলেন, ‘আমার ওকে এখন রেস্তোরাঁটির স্টার।’
তবে চাকরি খুঁজে পাওয়ার বেলায় সব প্রাণীই ওকের মতো এত সৌভাগ্যবান নয়।
বেইজিংয়ের ৩৩ বছর বয়স্ক স্কুলশিক্ষক সিন সিনের দুটি বিড়াল আছে, একটি সাদা-কালো এবং একটি কমলা। আর আছে একটি শিবা ইনো কুকুর।
দুই বছরের টাক্সেডো বা দুই রঙা বিড়াল চং বয়েরের জন্য একটি চাকরি খুঁজছিলেন সিন সিন। চওহওসুতে ৮ সেপ্টেম্বর সিভি পোস্ট করেন। আশা করছিলেন কোনো ক্যাট ক্যাফেতে সুযোগ পেয়ে যাবে এটি। কিন্তু এখন পর্যন্ত চাকরির দেখা পাননি।
বিড়ালটির মজুরি হিসেবে কয়েক ক্যান কেট ফুড কিংবা হালকা নাশতাই ছিল তাঁর চাওয়া।
‘ভেবেছিলাম রেস্তোরাঁর মালিকেরা যোগাযোগ করবে আমার সঙ্গে। এখন মনে হচ্ছে আমার নিজেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। বিড়ালটির সিভি আমার মনে হচ্ছে বাইরে পাঠাতে হবে।’ সিএনএনের কাছে হতাশা প্রকাশ করেন সিন সিন।
তিনি বলেন, ‘আমি এবং আমার স্বামী চেয়েছিলাম সে একটি কাজের বিড়াল হোক এবং নিজের খাবার নিজেই উপার্জন করুক।’
সিন জানান, বিড়ালদুটিকে খাওয়াতে মাসে তাঁর ৫০০ ইউয়ান বা ৭১ ডলার খরচ হয়।
‘আমার মনে হয় দিনের বেলা চং বয়েরের খুব আলস সময় কাটে। একটি চাকরি শরীরের কিছু শক্তি ক্ষয় করতে সাহায্য করবে ওকে।’ বলেন তিনি।
উল্লেখ্য চীনের প্রথম ক্যাট ক্যাফে উদ্বোধন হয় ২০১১ সালে, দক্ষিণের শহর গুয়াংজুতে। চীনের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় চলা অর্থনীতিবিষয়ক গণমাধ্যম সিবিএনডাটা জানিয়েছে দেশটিতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বা ক্যাফে প্রতি বছর ২০০ শতাংশ বাড়ছে।
২০২৩ সালের চার হাজারের বেশি ক্যাট ক্যাফে বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠান আছে। নিঃসন্দেহে সংখ্যাটা এখন আরও বেড়েছে।