ইংল্যান্ডের বাকিংহামশায়ারের বিকনসফিল্ড শহরের ভেতরে আছে ছোট্ট এক গ্রাম। বেকনসকট নামের গ্রামটির আয়তন দেড় একরের একটু বেশি। কাঠ, পাথর, নানা ধাতু আর কাচের তৈরি খুদে বাড়ি-ঘরগুলো দেখলে চমকাবেন। ভাববেন, আরে! গালিভার্স ট্র্যাভেলসের সেই লিলিপুটদের বাস্তব কোনো জগতে চলে এলাম নাকি! আরও অবাক করা ব্যাপার, এই গ্রামের ভেতর দিয়ে চলে গেছে ছোট্ট এক রেললাইন। তাতে আবার দিব্যি চলছে রেলগাড়ি। গ্রামটিতে পাবেন খুদে আকারের বাগানও।
অবশ্য একটু বুদ্ধি খাটালেই গোমরটা ফাঁস হয়ে যাবে। এটা আসলে একটা মডেল বা খেলনা গ্রাম। বলা চলে, ৯০ বছরের বেশি সময় ধরে এটি পর্যটকদের আনন্দ দিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই মনে করেন এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো মডেল গ্রাম।
বেকনসকট গ্রামটি তৈরি করেন বিকনসফিল্ডের বাসিন্দা ও একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক রোনাল্ড কালিংহ্যাম। ১৯২০-এর দশকের শেষ দিকে নিজের বাড়ির বাগানের মধ্যে খুদে এই রাজ্য গড়ার কাজে হাত দেন। পরিকল্পনাটা আসলে ছিল বাগানটিকে আরও সুন্দর দেখানো এবং বাড়িতে আসা হোমড়া-চোমড়া ও অভিজাত অতিথিদের একটু চমকে দেওয়া।
যদ্দুর জানা যায়, ১৯২৯ সালের আগস্টে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় খুদে রাজ্যটি। ১৯৩০-এর দশকে ধীরে ধীরে এটি পর্যটক আর সংবাদপত্রগুলোর নজর কাড়া শুরু করে। তারপর অবশ্য দিনকে দিন জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। দুনিয়াজুড়ে পরে এ ধরনের অনেক খুদে গ্রাম তৈরি হলেও বেকনসকটের মতো পরিচিতি পেয়েছে কমই।
দালানগুলো তৈরি করা হয়েছে কাঠ, পাথর আর এর ওপর পলেস্তারা দিয়ে। তবে কখনো কখনো ফোমবোর্ড ব্যবহার করা হয়েছে। ছোট্ট গ্রাম বা শহরটিতে ঘুরে বেড়ানোর সময় খুদে মানুষ বা লিলিপুটদেরও পাবেন। একেকজন সর্বোচ্চ চার ইঞ্চি লম্বা। নানা ধরনের কাজে ব্যস্ত তারা। রাস্তায় প্রতিবেশীর সঙ্গে গল্প করছেন কেউ, বাজারের চত্বরে গল্পে মশগুল তরুণেরা, জানালা পরিষ্কার করছেন কোনো নারী। তবে ঘটনা হলো, গালিভারের গল্পের লিলিপুটদের মতো এদের শরীরে প্রাণ নেই, এরা কেবল পুতুল বা খুদে ডামিই।
এবার বেকনসকটের বিশাল সেই মডেল রেলওয়ের বর্ণনা দেওয়া যাক। ছোট ছোট ট্রেনগুলো চলছে বাগানের রেল ট্র্যাক ধরে। এখানকার কোনো কোনো ইঞ্জিন কিংবা বগির বয়স ৫০ বছর।
যাত্রা শুরুর পর থেকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে এই মডেল গ্রামে। একপর্যায়ে আধুনিক স্থাপত্যরীতির আদলে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। তবে ১৯৯২ সালে আবার সিদ্ধান্ত হয় সেই ১৯৩০-এর দশকের সময়ের ইংল্যান্ডের দালান-কোঠার আদল অনুসরণের।
এবার লিলিপুট রাজ্যে কী কী দেখতে পাবেন তা জেনে নেওয়া যাক। চমৎকার একটি চিড়িয়াখানা পাবেন। বাঘ, সিংহ, পেঙ্গুইনসহ নানা প্রাণীর খুদে ডামি দেখবেন। খুঁজে পাবেন ছোট আকারের সিনেমা হল, ফায়ার স্টেশন, কলেজ, তেল শোধনাগার, খুদে একটি বন্দর এমনই আরও কত কী!
বেকনসকটে যাওয়াটা মোটেই কঠিন কাজ নয়। ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডন থেকে ট্রেনে চেপে চল্লিশ মিনিটেই পৌঁছে যাবেন বিকনসফিল্ডে। সেখান থেকে মাত্র সাত মিনিট হাঁটলেই চলে আসবেন আশ্চর্য সেই গ্রামে। তারপর টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকে পড়লেই নিজেকে আবিষ্কার করবেন রূপকথার এক আশ্চর্য জগতে।
সূত্র: অ্যামিউজিং প্ল্যানেট, গার্ল গন লন্ডন ডট কম, উইকিপিডিয়া