মেয়র পদটি একটি শহরের জন্য নিশ্চয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শহরবাসীর দেখভালের দায়িত্ব তাঁরই। কিন্তু এখন আপনি যদি শোনেন একটি শহরের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছে একটি বিড়াল, তাও এক-দুই বছর নয়, ২০ বছর! আপনার নিশ্চয় চোখ কপালে উঠবে। আজ ৮ আগস্ট আন্তর্জাতিক বিড়াল দিবসে থাকছে স্টাবস নামের ওই বিড়ালটির গল্প।
যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের ছোট্ট এক শহর টালকিটনা। মেরে-কেটে হাজার খানিক লোকের বাস সেখানে। উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে উঁচু চূড়া ডেনালির অবস্থান শহরটি থেকে খুব দূরে নয়। ১৯৯০-র দশকের বিখ্যাত টিভি শো নর্দার্ন এক্সপোজারে সিসেলি নামে যে কাল্পনিক শহরকে উপস্থাপিত করা হয়েছে সেটির অনুপ্রেরণা সম্ভবত টালকিটনা। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এবং বিশ্ববাসীর কাছে এটি সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পেয়েছে একটি বিড়ালকে মেয়র নির্বাচিত করায়।
টালকিটনার প্রধান সড়কে নাগলে’স নামে একটি মুদি দোকান ছিল। এর ইতিহাস একেবারে আলাস্কার গোল্ডরাশ বা ‘সোনা জ্বরে’র সময়কার। ১৯২১ সালে গোড়াপত্তন হওয়া নাগলে’স প্রথমে ছিল একটি লগ কেবিন। এটি স্বর্ণসন্ধানীরা বিশ্রাম বা রাত কাটানোর জন্য ব্যবহার করতেন তখন। পরবর্তীতে ডাকঘর এমনকি আঞ্চলিক সদরদপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৭০-র দশক থেকে সব সময়ই এখানে রেসিডেন্ট কেট বা আবাসিক বিড়াল ছিল।
একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদপত্রে আসতে শুরু করে টালকিটনা শহর এবং তার বিড়াল মেয়রের কাহিনি। বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের দেওয়া তথ্য বলছে, শহরের বাসিন্দারা মেয়র পদটির জন্য যেসব মানুষ আবেদন করেছিলেন তাঁদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছিলেন না মোটেই। অতএব টালকিটনার বাসিন্দারা ওই সব প্রার্থীর বদলে বিড়ালটির নাম লিখে ভোট দিয়ে একে মেয়র নির্বাচিত করে ফেলে।
বিড়ালটিকে মেয়র বানানোর পর থেকে এটির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হওয়ার পর এটি রীতিমতো তুঙ্গে পৌঁছে। এমনকি আশপাশের শহরের মানুষেরাও একে দেখতে আসা শুরু করে। স্টাবসের নামে ডাক যোগে আসত প্রচুর কার্ড ও চিঠি।
অনেক সময়ই বলা হয় বিড়ালের নাকি নয়টি জীবন আছে। মেয়রের অফিসে থাকাকালীন স্টাবস যেন এর সবগুলোই ব্যবহার করতে বদ্ধ পরিকর ছিল। একবার যেমন একটি রেস্তোরাঁর ফ্রাইয়ারের (যেখানে তেল ঢেলে কিছু ভাজি করা হয়) মধ্যে পড়ে যায় সে। সৌভাগ্যক্রমে ওই সময় এটি জ্বালানো ছিল না ও শীতল ছিল। আরেকবার এলাকার কিশোররা বিবি গান দিয়ে তাকে গুলি করে। তবে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় স্টাবস।
তাকে কাছের তুলনামূলক বড় শহর ওয়াসিলার এক পশুচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় স্টাবসের ফুসফুসে ছিদ্র, পাঁজরের হাড়ে চিড় এবং শরীরের এক পাশে বড় ও দীর্ঘ একটি ক্ষত আবিষ্কার করেন চিকিৎসক। মোটা ১২টি সেলাই লাগে স্টাবসের। সমর্থকেরা অবশ্য তার চিকিৎসার খরচে কার্পণ্য করেনি। এমনকি স্টাবসের জন্য যে টাকা ওঠে তা ছিল চিকিৎসার বিলের চেয়ে অনেক বেশি। পরে বেঁচে যাওয়া অর্থ স্থানীয় পশু দাতব্য সংস্থাগুলিতে দান করা হয়।
একসময় সুস্থ হয়ে জেনারেল স্টোরে ফিরে আসে স্টাবস। পালন করতে থাকে মেয়রের দায়িত্ব। ২০১৭ সালে বয়স হয়ে স্বাভাবিক মৃত্যুই হয় স্টাবসের। তার মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে পড়ে গোটা শহরের মানুষ। পরে নাগলি’সের যমজ দুই বিড়াল অরোরা এবং ডেনালিকে নতুন প্রতীকী মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করে শহরটি ঐতিহ্য বজায় রাখে শহরবাসীরা। ২০২২ সালে ডেনালি মারা গেলেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অরোরা নাগলি’সে থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র: এটলাস অবসকিউরা, সিএনএন, উইকিপিডিয়া