শরৎকালে কোকিলপুরাণ লিখিবার সমস্যা এই যে, কোকিল ডাকে না। কোকিলের কুহুধ্বনি কর্ণকুহরে প্রবেশ না করিলে লেখার জোশ আইসে না। তাহার জন্যই লেখা হয় না।
কিন্তু ইদানীং একটা চরিত্র পাইয়াছি। তিনি রতন’স ডাইনের স্বত্বাধিকারী রতন সাহেব। একদা তিনি নাকি এফডিসিতে নায়ক-নায়িকা-ভিলেন-ক্রুসহ সবাইকে রসেবশে রাখিতেন। এক্ষণে আসিয়া জুটিয়াছেন আমাদের স্কন্ধে এবং তাঁহার সাতিশয় ওজনে আমাদের স্কন্ধ ক্রমাগত নিম্নগামী হইতেছে। আমরা উপলব্ধি করিতে পারিতেছি, রতন’স ডাইনের স্বত্বাধিকারী রতন সাহেব আমাদের স্কন্ধে দীর্ঘদিন সওয়ার করিয়া থাকিবেন।
কী করিয়াছেন তিনি? না, বিশেষ কোনো দুষ্টু কাজ করিয়াছেন বলিয়া কেহই প্রমাণ দাখিল করিতে পারিবেন না। এমনকি আমি স্বয়ং তাঁহার বিরুদ্ধে প্রমাণসাপেক্ষ কোনো অভিযোগ উত্থাপন করিতে পারিব বলিয়া মনে হয় না। তাহাই আমি কোনো অভিযোগ উত্থাপন না করিয়া শুধুই লিখিয়া রাখিতেছি। যাহা হউক, বলি। ধরুন, আপনি সান্ধ্য নাশতার জন্য তাঁহাকে বলিলেন, ভাইসাহেব, এক বাটি ডাল সবজি বা ডাল, একখানা আটার রুটি এবং একখানা ডিম উত্তমরূপে প্রস্তুত করিয়া আমার সামনে লইয়া আসুন। তিনি প্রবল বেগে মাথা নাড়িতে নাড়িতে বলিবেন, একখানা রুটি, একখানা ডিমের মামলেট আর এক কাপ চা। এক্ষণই দিতেছি জনাব। আপনি তখন বলিবেন, বাপুহে, উহা নহে। রুটি ও ডিমের মামলেটের সহিত আমি আপনার কাছে এক বাটি ডাল-সবজি চাহিয়াছিলাম।
এইবার তিনি বুঝিবেন এবং রুটি সেঁকিতে বসিবেন। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। দেওয়ার সময় দেখা গেল আরও কয়েকজন খদ্দের আসিয়া উপস্থিত। এইবার শুরু হইবে আসল খেলা। রতন’স ডাইনের স্বত্বাধিকারী রতন সাহেব এইবার আপনার অনুমোদিত নাশতা ভিন্নজনের কাছে পাঠাইবেন। তিনি সে নাশতা দেখিয়া আঁৎকাইয়া উঠিবেন, নারী হইলে চমকাইয়া উঠিবেন। রতন সাহেব তাঁহার সহকারীদিগের চতুর্দশাধিক গুষ্টি উদ্ধার করিয়া বলিবেন, অমুক স্যারের টেবিলে লইয়া যাও। তাঁহার সহকারী যখন তাহা আপনার সামনে পেশ করিবেন, তখন তাহা কয়েক হাত ঘুরিয়া আসিয়া ক্লান্ত। আপনি ভক্ষণ করিতে শুরু করিবেন।
আপনার ভক্ষণ শেষ। বলিলেন, ‘বিল কত হইয়াছে বাপু?’ রতন’স ডাইনের স্বত্বাধিকারী রতন সাহেব তখন হিসাব করিতে বসিবেন। ‘ডাইল ১০ টাকা, রুটি এত, অমুক এত, তমুক তত, মোট এত।’ বলিলেন, ‘এই আইটেমখানা বাদ রহিয়াছে।’ তিনি পুনরায় প্রথম হইতে হিসাব শুরু করিবেন। সব শেষে বলিবেন এত হইয়াছে। আপনি অর্থ পরিশোধ করিতে গিয়া আরও বিপত্তিতে পড়িবেন। তাহার কাছে ৫ টাকার কয়েন বা নোট থাকিবে না। তিনি আপনাকে এক গ্লাস পানিও আগাইয়া দিয়া বলিতে পারেন, জনাব, ‘৫ টাকা পরিশোধ হইয়াছে।’