জাপানের ছোট্ট দ্বীপ তাশিরোজিমার গল্প বলেছিলাম মনে আছে, যেখানে মানুষের চেয়ে বিড়াল বেশি। মজার ঘটনা, জাপানে এমন আরও দ্বীপ আছে, যেখানে বিড়ালের আধিপত্য। এমনই এক দ্বীপ আয়োশিমা। দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বীপটি একসময় জেলেপল্লি হিসেবে পরিচিত হলেও এখন বিড়ালদের দ্বীপ নামেই চেনেন সবাই।
জাপানের নাগাহামা একটি ফেরি ধরে ৩০ মিনিটে পৌঁছে যেতে পারবেন ইনল্যান্ড সাগরের বুকে অবস্থিত বিড়ালদের এই রাজ্যে। বিড়ালের কল্যাণে দ্বীপটিতে এখন পর্যটকদের আনাগোনা বেশ বেড়েছে। ‘একটা সময় পর্যন্ত পর্যটক আসত কমই আমার ফেরিতে।’ বলেন ফেরির ক্যাপ্টেন নবুইয়োকি নিনোমিয়া, ‘এখন প্রতি সপ্তাহেই পর্যটক নিয়ে আসতে হয়। আর পর্যটকদের জন্য ছোট্ট সেই দ্বীপে আমাদের একটি জিনিসই আছে, সেটি বিড়াল।’
এখানকার বিড়ালদের আধবুনো বলতে পারেন। তবে মানুষের সঙ্গে পেয়ে অভ্যস্ত তারা। খুশিমনেই পর্যটকদের সঙ্গে খেলা করে তারা। কারণ বিড়ালদের জানা আছে, পর্যটকের আগমন মানেই সঙ্গে করে টুনা মাছের ক্যানসহ নানা ধরনের মুখরোচক খাবার নিয়ে আসা। এমনকি দ্বীপের একমাত্র কমিউনিটি সেন্টারটির পাশে বিড়ালদের খাওয়ানোর একটি বিশেষ জায়গাও আছে।
১৯৪০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত দ্বীপে মোটামুটি ৯০০ মানুষের বাস ছিল। এদের বেশির ভাগই ছিলেন জেলে। যত দূর জানা যায়, দ্বীপের এই জেলেরা ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে প্রথম এখানে বিড়াল আমদানি করেন।
তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দ্বীপের বেশির ভাগ জেলেই অন্যত্র পাড়ি জমান। তারপর ধীরে ধীরে আরও মানুষ উন্নত জীবনের আশায় মূলভূমি কিংবা অন্য দ্বীপে পাড়ি জমান। এভাবে কমতে কমতে দ্বীপে এখন ছয়জন মানুষের বাস বলে জানা গেছে। এদের সবাই বৃদ্ধ। এদিকে উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে এবং তাদের শিকার করার মতো কোনো প্রাণী না থাকায় বাড়তে বাড়তে বিড়ালের সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ২০০-এর আশপাশে।
অবশ্য বেশির ভাগের ধারণা, এটা বড় কোনো ব্যাপার নয়, বিড়ালরাজ্যে বিড়ালেরা মিলেমিশে ভালোই আছে। ‘এটি যেন বিড়ালদের এক রাজ্য’ বলেন স্থানীয় বাসিন্দা কাজুইয়োকি ওনো, ‘রাস্তায় শুয়ে শুয়ে দিনভর সূর্যের তাপের ওম নিতেই পছন্দ করে ওরা।’
‘গ্রীষ্ম আর বসন্তে পর্যটকেরা খাবার নিয়ে আসেন বিড়ালদের খাওয়াতে। তবে যখন তাপমাত্রা বেশি কমে আসে, সাগর অশান্ত হয়ে ওঠে, খুব কম পর্যটকেরই আগমন ঘটে এখানে। কখনো উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে নৌকা কিংবা ফেরিও আসে না তখন।’ বলেন ওনো।
অবশ্য দ্বীপটি বিড়ালদের মোটামুটি দখলে চলে গেছে—এ খবর একটা সময় পর্যন্ত মূলভূমির মানুষের খুব একটা জানা ছিল না। পরে ফুবিরাই নামের এক আলোকচিত্রী দ্বীপের এই বিড়ালদের অনেক ছবি তোলেন। তাঁর ব্লগে এখানকার বিড়ালদের কথা উঠে আসে, সঙ্গে নানা ভঙ্গিমায় তাদের ছবি। আর এই ছবিগুলো ২০১২ সালের দিকে ভাইরাল হওয়ার পরই দ্বীপটিতে বাড়ে পর্যটকদের আনাগোনা। কালক্রমে পরিচিতি পেয়ে যায় ‘বিড়ালদ্বীপ’ হিসেবে। তবে এখনো পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। মানে এখানে কোনো হোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকান খুঁজে পাবেন না। কাজেই আয়োশিমায় কেউ ভ্রমণে যেতে চাইলে প্রয়োজনীয় জিনিস সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়।
সূত্র: এল দেট ইন্টারেস্টিং ডট কম, নিউ ইয়র্ক পোস্ট, জাপান সুইচ ডট কম
আরও পড়ুন: