দক্ষিণ সুদান, উগান্ডাসহ উষ্ণমণ্ডলীয় পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন জলাভূমিতে দেখা মেলে আশ্চর্য এক পাখির। চমকে দেওয়ার অনেক কিছুই আছে এর আচরণ ও চেহারায়। তবে বিশেষভাবে বলতে হয় এর বিশাল ঠোঁটটির কথা। এটি শিকারে যেমন সাহায্য করে পাখিটিকে তেমনি দেখতেও ভারি অদ্ভুত। এদের আরও অনেক মজার মজার ব্যাপারও আছে।
একে দেখে আর কোনো পাখির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলার সুযোগ নেই। চার থেকে পাঁচ ফুট লম্বা পাখিটির পালক নীলচে-ধূসর। ছড়ানো পাখার দৈর্ঘ্য আট ফুটের মতো। আর এদের মুখের অনেকটা জুড়েই আছে লম্বা ঠোঁট। এদের ঠোঁটের দৈর্ঘ্য কত শুনলে চমকাবেন, এক ফুটের মতো। এই ঠোঁটে থাকে বাদামি ছোপ। পাঁচ ইঞ্চি চওড়া ঠোঁটের কিনারা চোখা। আর শেষ প্রান্তে একটা হুকের মতো থাকে। সব মিলিয়ে বিশেষ এই ঠোঁট বড় শিকার ধরতে সাহায্য করে সুবিলদের (Shoebill)।
সুবিলদের ঠোঁট দেখে ডাচদের পুরোনো দিনের সেই বিশালাকায় কাঠের জুতার কথা মনে পড়ে যাবে। আর এদের নাম পাওয়ার করণও এটি। অর্থাৎ জুতার মতো ঠোঁট হওয়ার এই পাখিদের নাম হয়ে গেল সুবিল। সুবিলদের আরেকটি মজার বিষয় হলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে পারে এরা। একই সঙ্গে এর সোনালি চোখের স্থির দৃষ্টি যে কাউকে আতঙ্কিত করে তুলতে পারে।
কয়েক শতক ধরে সুবিলদের আসলে কোন পরিবারে ফেলা উচিত, তা নিয়েই তর্ক চলেছে প্রকৃতিবিদ ও প্রাণিবিজ্ঞানীদের। একটা সময় তাদের স্টর্ক বা সারসদের অন্তর্ভুক্ত করা হলেও তারা এখন নিজেরা আলাদা একটি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। তবে সারস এবং বকদের কিছু বৈশিষ্ট্য এদের আছে। যেমন লম্বা গলা ও পা। তবে তাদের নিকটতম আত্মীয় হলো পেলিকান। এদের ডিমের খোসা যেমন পেলিকেনদের মতো, তেমনি ডিএনতেও পেলিকেনদের সঙ্গে অনেকটা মিল পাওয়া যায়।
এদের মাছ শিকারের পদ্ধতিটিও বেশ মজার। পানিতে একেবারেই নট নড়ন-চড়ন ভঙ্গিতে অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। আর এদের এই স্থির দাঁড়িয়ে থাকার কারণে অনেক প্রাণীই বিভ্রান্ত হয়। এটা যে আছে টেরই পায় না মাছ। সুবিল এভাবেই একটি মাছের আসার অপেক্ষায় থাকে। তারপর এর উপস্থিতি টের না পাওয়া অসতর্ক মাছটির ওপর ডানা মেলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ ভয়ংকরভাবে পাখিটিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা ছাড়া শিকারের আর কিছুই করার থাকে না তার। স্বাভাবিকভাবেই আক্রমণে এই পাখিদের মূল হাতিয়ার অবশ্যই ঠোঁট।
অবশ্য বর্তমানে এই পাখিটি খুব বেশি দেখা যায় না। বুনো অবস্থাতে সংখ্যা কমছে। চিড়িয়াখানায়ও দেখা পাওয়া ভার। উনিশ শতকে সুদানের সরকার একে সংরক্ষিত প্রজাতি হিসেবে ঘোষণা করে। তবে এটা সংগ্রাহকদের চিড়িয়াখানার প্রাণী হিসেবে এটি পরিবহনের চেষ্টায় বাধা দিতে পারেনি। খার্তুমের উত্তর থেকে আরও বিভিন্ন প্রাণীর সঙ্গে ট্রেনে তিনটি সুবিল আনান মিসরের গিজার জুওলজিকেল গার্ডেনের ওই সময়কার পরিচালক। পরে সেখানে বছর পাঁচেক বেঁচে ছিল এরা। এখন যে অল্প কিছু চিড়িয়াখানায় এই পাখি আছে এর মধ্যে আছে চেক রিপাবলিকের প্রাগ চিড়িয়াখানা, বেলজিয়ামের পাইরি দাইজা সাফারি পার্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস ওয়ার্ল্ড অ্যাকুরিয়াম।
এমন চমৎকার একটি পাখির দেখা পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে আফ্রিকা মহাদেশে। তবে এর বিচরণের জায়গায় গেলে ছবি তোলার ব্যাপারে সতর্ক থাকাটা জরুরি। কারণ, এরা মোটেই শান্ত-সুবোধ পাখি নয়।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, মেন্টাল ফ্লস