আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের ক্যারিয়ারের শুরুটা বডিবিল্ডার হিসেবে হলেও বিশ্ববাসী তাঁকে সবচেয়ে বেশি চেনে হলিউডের ছবির অ্যাকশন হিরো হিসেবে। এমনকি পরবর্তী সময়ে দুই মেয়াদ মার্কিন অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও শোয়ার্জনেগার নামটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ভক্তদের মাথায় চলে আসে টার্মিনেটর কিংবা প্রিডেটরের মতো ছবির কোনো দৃশ্য। আজকের এই দিনে, অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ৩০ জুলাই পৃথিবীতে আসেন এই অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ।
অস্ট্রিয়ার গ্রাজ শহরের কাছে অবস্থিত থাল এলাকায় জন্ম শোয়ার্জনেগারের। বালক বয়স কিংবা কৈশোরটা মোটেই ভালো কাটেনি তাঁর। বাবা গুস্তাভ শোয়ার্জনেগার ছিলেন মদে আসক্ত এক পুলিশ চিফ। ছোট ছেলে আর্নল্ডের তুলনায় বড় ছেলে মেইনহার্ডের প্রতি স্পষ্ট পক্ষপাতিত্ব ছিল তাঁর। শোয়ার্জনেগারকে তিনি মারধর করতেন বলেও শোনা যায়। শোয়ার্জনেগারের ছোটবেলার স্বপ্ন বডিবিল্ডিং নিয়েও ঠাট্টা-তামাশা করতেন। বরং মা অরেলিয়ার সঙ্গে শোয়ার্জনেগারের সম্পর্ক ছিল চমৎকার।
কৈশোর থেকেই বডিবিল্ডিংয়ে মনোযোগ দেন শোয়ার্জনেগার। বডিবিল্ডিং ক্যারিয়ার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় একুশ বছর বয়সে ১৯৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন তিনি। সেখানে আসার পর চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন।
তবে দর্শকদের শোয়ার্জনেগার আকৃষ্ট করতে শুরু করেন ১৯৭৬ সালে ‘স্টে হাংগ্রি’তে গোল্ডেন গ্লোব বিজয়ী অভিনয় এবং ১৯৭৭ সালে তথ্যচিত্র ‘পাম্পিং আয়রন’ মুক্তি পাওয়ার পর। ১৯৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-সুপিরিয়র থেকে স্নাতক করেন তিনি।
চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি আরও বাড়ে ১৯৮২ সালে কোনান দ্য বারবারিয়ান অভিনয়ের পর। ১৯৮৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন শোয়ার্জনেগার। পরের বছর আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের অভিনেতা হিসেবে ক্যারিয়ারে একটি মাইলফলক। কারণ এ বছরই মুক্তি পায় তাঁর অভিনীত সবচেয়ে বিখ্যাত ছবি টার্মিনেটর। জেমস ক্যামেরন পরিচালিত এই ছবিটিই অ্যাকশন হিরো হিসেবে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যায় শোয়ার্জনেগারকে। পরে ১৯৯১ সালে এর সিক্যুয়েল টার্মিনেটর-২: জাজমেন্ট ডে এবং ২০০৩ সালে টার্মিনেটর-৩: রাইজ অব দ্য মেশিনসেও অভিনয় করেন।
এর মধ্যে অবশ্য ১৯৮৬ সালে টিভি সাংবাদিক ও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাগনি মারিয়া শ্রিভারকে বিয়ে করেন।
রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক শোয়ার্জনেগার ধীরে ধীরে দলটির রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর রাজনৈতিক কর্মজীবনজুড়ে শোয়ার্জনেগার সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রিগানকে ব্যক্তিগত অনুপ্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ২০০৩ সালে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার ৩৮তম গভর্নর হন। আগের গভর্নর গ্রে ডেভিসকে সরিয়ে দেওয়ার পর একটি রিকল নির্বাচনের মাধ্যমে গভর্নর হন এই হলিউড তারকা।
২০১১ সালে দ্বিতীয় মেয়াদের মতো গভর্নরের দায়িত্ব পালন শেষে পুনরায় অভিনয়ে ফিরে আসেন। এ বছরই শোয়ার্জনেগার ও শ্রিভার আলাদা হওয়ার ঘোষণা দেন। ২০২১ সালে তাঁদের ডিভোর্সের প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়।
২০২৩ সালের ২৫ মে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার অভিনীত অ্যাকশন-কমেডি ঘরানার সিরিজ ‘ফিউবার’। আট পর্বের সিরিজটি দর্শকমহলে বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
সূত্র: হিস্ট্রি ডট কম, বায়োগ্রাফি ডট কম