নিন্দুকের কথায় পাত্তা না দিয়ে কাক পর্যন্ত গলা ফাটিয়ে গাইছে; আর আপনি ভাবছেন, কে কী বলে। এটা কোনো কথা হলো? কণ্ঠ, সুর—এগুলো কি সবার সমান থাকে নাকি? থাকে না। বেসুরো বলে যে গান গাইবেন না, তা তো হয় না। আইনেও তো বাধা নেই। তবে?
গান যে আপনি গাইছেন না, তা কিন্তু না। বাথরুম সিঙ্গারের তালিকায় আপনার নামটা কিন্তু নিজেই দিয়েছেন। এবার বলুন, এই প্রতিভা দেয়ালের বাইরে আনতে না পারলে এত অধ্যবসায়ের দাম কী? কবি কাজী নজরুল ইসলামের, ‘থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে’ দিয়েই–বা কী শিখলেন? দেখিয়ে দিন অদেখা আপনাকে, জনতাকে জানিয়ে দিন আপনিও পারেন।
কতজনই তো এই প্রতিভা দিয়েই করে খাচ্ছে। আপনিও হাঁটুন সে পথে। তাই বলে বাথরুমে গান গাওয়ার ঐতিহ্য কিন্তু হারাতে দেওয়া যাবে না। শুধু খেয়াল রাখবেন, গান থেকে নাচ এবং নাচের ক্লান্তিতে যাতে বাথরুমেই ঘুমিয়ে না পড়েন। কারণ, ঘরের বাকি সদস্যদেরও তো সুযোগ দিতে হবে!
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ‘একটি তুলসী গাছের কাহিনি’ গল্পে হাবিবুল্লাহকে বেসুরো হারমোনিয়ামে অবক্তব্য সংগীত-সমস্যার স্রষ্টা আখ্যা দিয়েছেন। প্রতিভা জানান দিলে এমন স্রষ্টার আখ্যা কিন্তু আপনিও পেতে পারেন। তাই বলে গান শুনে সবাই বিরক্ত হবে বলে চিন্তিত হবেন? ভাববেন না; সুন্দর করে একটি গভীর নিশ্বাস নিন। আবার গাইতে শুরু করুন। আর মনে মনে বলুন—‘জগতে কেউ পারফেক্ট নয়!’
সমস্যা বা মন খারাপের সময় মনকে শীতল করতে মন খুলে গাইতে পারেন। শুধু খেয়াল রাখবেন, গানটা যেন সমস্যার চেয়ে ভয়ানক না হয়ে যায়। এ সময় পুরোপুরি না জানা গান আওড়াতে শুরু করলেও আতঙ্কিত হবেন না। গানের কথা যাই হোক—গাইবেন, পারলে নিজের লেখা গান গলা ছেড়ে গাইবেন। হয়তো এভাবেই জানা যাবে—আপনি এক বিরাট পটেনশিয়াল গীতিকার।
প্রথমত বন্ধুদের আড্ডায় গেয়ে সংগীত ক্যারিয়ার শুরু করুন। দেখবেন, আপনার আগেই গানের পরের লাইন গাওয়া দু-একজন পেয়ে গেছেন। আর সবাই একসঙ্গে কোরাস ধরলে তো বেঁচেই গেলেন। এভাবে এগোতে থাকলে নিয়মিত উন্নয়নে জনসম্মুখে গাওয়ার সুযোগও আসবে। সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। খুব সিরিয়াস মুডে গান শুরু করুন, চালিয়ে যান। আপনাকে দাবিয়ে রাখে—এমন সাধ্য কার?
মহাবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন, ‘যারা আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। কারণ, তাঁদের কারণে কাজটি আমি নিজেই করতে পেরেছি।’ তারপরও গাইবেন না! আইনস্টাইনের মতো জ্ঞানী লোকের কথায় অন্তত নিজের প্রতিভায় আপনার আস্থা ফেরা উচিত। এই শক্তিতে বলীয়ান হলে যেকোনো ধরনের অসহযোগিতা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে আপনিও হয়ে উঠবেন বিশিষ্ট গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী। সে ক্ষেত্রে খুলে যেতে পারে আয়ের ভাগ্যও। ক্যারিয়ারে এমন বহু প্রস্তাব আসবে—ভাই/আপু, ‘গান থামাতে কত লাগবে?’ শুনবেন না, হতাশ হবেন না। একদম না।