পিরেনিজ পর্বতমালার কোলে আশ্চর্য সুন্দর এক গ্রাম মন্টোইয়ু। ৮০০-র কিছু বেশি জনসংখ্যার গ্রামটিতে কোনো এটিএম বুথ নেই। তবে এখানে পাবেন ১৫টি বইয়ের দোকান।
স্বাধীনভাবে পরিচালিত এসব বইয়ের দোকানের করণে গ্রামটি পেয়েছে দক্ষিণ ফ্রান্সের একমাত্র ভিলেজ ডু লিবরে বা বইয়ের গ্রামের স্বীকৃতি।
অবশ্য এটিই পৃথিবীর একমাত্র বুক ভিলেজ বা বইয়ের গ্রাম নয়। ওয়েলসের হে-অন-উইয়িতে আছে ২০টির বেশি বইয়ের দোকান। ১৯৬৩ সালে প্রথম বইয়ের গ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি পায় এটি। বেলজিয়ামের রেদ্যু এমন স্বীকৃত পায় ১৯৮৪ সালে।
মন্টোইয়ু এমনকি ফ্রান্সেরও একমাত্র বুক ভিলেজ নয়। ব্রিটানির ব্যাসেরো দেশের প্রথম বুক ভিলেজের মর্জাদা পায় ১৯৮৯ সালে। তারপর ১৯৯০ সালে এই তালিকায় যুক্ত হয় মন্টোইয়ু। বর্তমানে দেশটিতে এমন আটটি গ্রাম আছে।
এসব তথ্য জানা যায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে।
বুকবাইন্ডার মিশেল ব্রেবোঁর ১৯৮০-র দশকে প্রথম এমন এক বইয়ের জগত গড়ে তোলর স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন এমন একটি গ্রাম যেটি বই তৈরির সংরক্ষণাগার হিসাবে বেশি বিবেচিত হবে।
‘এটি সম্পূর্ণরূপে ধারণার বাইরের একটি বিষয়,’ বলেন মন্টোইয়ুর বই তৈরি শিল্প ও এর কলা-কৌশল নিয়ে কাজ করা যাদুঘর মিউজে দেজ আর্টস অ্যান্ড মেটিয়োর ডু লিবরের নতুন পরিচালক গেয়াল ফেরাদিনি, ‘এটি ব্রেবোঁর কৃতিত্ব। লোকেরা আমাকে বলে যে তিনি সে ধরনের ব্যক্তি ছিলেন যার সঙ্গে যে কেউ কাজ করতে চাইবেন।’
মন্টোইয়ুর বইয়ের দোকানগুলি হয়তো ব্রেবোঁর স্বপ্নের মূল জায়গায় থাকেনি। তবে তাঁরা পর্যটকদের বিশেষ করে বইপ্রেমীদের যে আকৃষ্ট করতে পারছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
১৯৯০-র দশকের গোড়ার দিকে, ব্রেবোঁ এবং তাঁর প্রতিষ্ঠা করা সংস্থাটির অন্যান্য সদস্যরা বই বিক্রেতাদের আগ্রহী করে তুলতে সক্ষম হন। তাঁদের দোকানের সামনের অংশটি চমৎকারভাবে সাজিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রলুব্ধ করেন। গ্রামের কিছু মানুষ অন্য জায়গায় চলে যাওয়ার পর বছর কয়েক ধরে এই জায়গাগুলি ফাঁকাই পড়ে ছিল।
এখানে বইয়ের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে মানুষের জীবন। যেমন রব ক্লাইস নিজের বইয়ের দোকান অ্যাবেলার্দের ওপরে এক দশকের বেশি সময় বাস করেন। এখন ২০১৭ সালে কেনা একটি বাড়িতে উঠেছেন। আর বইয়ের দোকানের ওপরের তলাকে বানিয়ে ফেলেছেন বইপ্রেমীদের রাত কাটানো এবং খাওয়ার জায়গায়।
দ্বিতীয় তলায় মাচা-সদৃশ রুমটিতে আলো ঢুকার প্রচুর জায়গা আছে। শেলফে রাখা চামড়ার বাঁধা বইগুলিতে যখন আলো পড়ে চকচক করে ওঠে খুশিতে ভরে ওঠে একজন বইপ্রেমীর মন।
ব্রেবোঁ ১৯৯২ সালে মারা যান। তবে যতদিন বইয়ের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি থাকবে গ্রামটির ততদিন তাঁকে মনে রাখবে এখানকার মানুষ। তাঁর প্রচেষ্টার দরুনই এই ছোট্ট গ্রাম বইপ্রেমীদের জন্য গুপ্ত এক স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। যারা একে খোঁজে তাকে স্বাগত জানাতে যে সদাপ্রস্তুত।