অনলাইল ডেস্ক
লাইব্রেরি থেকে বই ধার নিয়ে কয়েক যুগ পর ফেরত দেওয়ার ঘটনা তো প্রায়ই শোনা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভুলে যাওয়ার বা আলসেমির কারণে বই ফেরত দেওয়া হয়নি। কিন্তু পাঠক যদি হোন একজন পাঁড় ভক্ত, তখন ব্যাপারটা আলাদা! তার ওপর বইটি যখন জর্জ অরওয়েলের উপন্যাস— ১৯৮৪।
যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন অঙ্গরাজ্যের একটি লাইব্রেরিতে জর্জ অরওয়েলের ডিস্টোপিয়ান উপন্যাস ‘১৯৮৪’ ৬৫ বছর পর ফেরত দিয়েছেন এক পাঠক।
বইটির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া একটি নোটে ৮৬ বছর বয়সী পাঠক নিজেকে ‘ডব্লিউপি’ নামে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, পোর্টল্যান্ডের মাল্টনোমাহ কাউন্টি লাইব্রেরিতে বইটা ফেরত দেওয়ার একটা কারণ আছে।
নোটটিতে লেখা রয়েছে, ‘বইটা আবার পড়ার পর আমি বুঝতে পারি, এর প্রাসঙ্গিকতা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। বইটিকে আবার পড়াশোনার মধ্যে রাখা উচিত।’
অরওয়েলের উপন্যাসটিতে সর্বাধিপত্যবাদ (টোটালিটারিয়ানিজম) এবং সত্যের রূপগুলো অন্বেষণ করা হয়েছে।
ওই ব্যক্তি নোটে লিখেছেন, ‘আমি বইটি ফেরত দিতে চেয়েছিলাম ১৯৫৮ সালে যখন (পোর্টল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটি) থেকে স্নাতক হতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু কোনও কারণে সেটি আর হয়ে ওঠেনি। এত দেরি হওয়ার জন্য দুঃখিত। ৮৬ বছর বয়সে আমি অবশেষে আমার বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকতে চেয়েছি।’
ব্যক্তিটি বলেছেন, বইটির কিছু অংশ পুনঃপাঠ করতে গিয়ে এটি ফেরত দেওয়ার ইচ্ছে জাগে। বিশেষ করে বইয়ের ২০৭ নম্বর পৃষ্ঠার একটি সংক্ষিপ্তসার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখানে উল্লেখযোগ্য অংশগুলো আজও ততটাই প্রাসঙ্গিক যতটা ৬৫ বছর আগে ছিল। শুধু ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া শব্দগুলো যোগ করুন, তাহলেই দেখবেন আপনি ২০২৩–এর কথাই পড়ছেন!’
১৯৪৯ সালে প্রকাশিত উপন্যাসটিতে এমন এক ভয়ংকর কল্পিত বিশ্বের গল্প বলা হয়েছে যেখানে একটি টোটালিটারিয়ান শাসনদণ্ড ক্ষমতার বিরুদ্ধে যে কোনো সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনাকেও দমন করে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ২০১৭ সালে ‘বিকল্প সত্য’ (অলটারনেটিভ ট্রুথ) নামে এক নতুন বয়ান হাজির করেন। মূলত প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে লোকসমাগম বাড়িয়ে দেখানো নিয়ে বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এমন তত্ত্ব আনেন। এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে অরওয়েলের ১৯৮৪ উপন্যাস বিক্রি হু হু করে বেড়ে যায়।
লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ বলেছে, এত দেরিতে ফেরত দিলেও ওই পাঠককে তাঁরা কোনো জরিমানা করবেন না।