মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অরিগন উপকূলের প্রাকৃতিক ওই গর্তটা দেখলে চমকে উঠবেন। এমনকি ভয়ও পেতে পারেন। চারপাশ থেকে সাগরের জল এতে এসে পড়ছে, তারপর ভেতরে হারিয়ে যাচ্ছে। পানির স্রোত এখানে এতটাই প্রবল যে আপনার মনে হবে ফুটছে। একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্ন জাগবে মনে। এত এত পানি যাচ্ছে কোথায়?
কেপ পারপেটুয়ার কাছে প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত এই গর্ত পরিচিত থর’স ওয়েল নামে। একসময় একে বিবেচনা করা হতো অরিগনের সবচেয়ে বড় অমীমাংসিত রহস্যগুলোর একটি হিসেবে। হঠাৎ দেখে আপনার মনে হতে পারে তলাবিহীন গর্তটা চারপাশের সাগরের সব পানি গিলে নিচ্ছে। একে কেউ বলে ‘সিংকহোল’, কেউ ‘নরকের দরজা’ কেউ আবার ‘প্রশান্ত মহাসাগরের পানি অপসারণের পাইপ’। অবশ্য এমন নাম পাওয়াটা যে খুব একটা অস্বাভাবিক নয়, যারা এর কাছে গিয়েছেন, থর’স ওয়েলের টগবগ করে ‘ফুটতে থাকা’ পানি চাক্ষুষ করেছেন, তাঁরা সহজেই বুঝতে পারবেন।
জোয়ারের সময় পানি যেন গেইজার বা উষ্ণ প্রস্রবণের পানির মতো লাফালাফি করতে থাকে। এ সময় ৪০ ফুট পর্যন্ত পৌঁছে যায় পানির উচ্চতা। এটা দেখা নিঃসন্দেহে রোমাঞ্চকর। তবে কখনো কখনো পানি এতটাই ফুঁসতে থাকে যে রীতিমতো ভয় লাগবে আপনার। ওই সময় এটা কিছুটা বিপজ্জনকও। প্রাকৃতিক এই বিস্ময় দেখতে অরিগনে হাজির হোন প্রচুর পর্যটক।
তবে এই গুহার ছাদ কোনো এক সময় ধসে পড়ে, রয়ে যায় তীর থেকে বেশ কয়েক মিটার দূরে মোটামুটি গোলাকার এক গর্ত। আপাতদৃষ্টিতে একে তলাবিহীন গর্ত মনে হলেও এটি কেবল ২০ ফুট গভীর।
দেখে মনে হতে পারে থর’স ওয়েলের জল পাতালের আশ্চর্য কোনো জগতে চলে যায়, তবে এখানে সাগর জলের আসা-যাওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই হয়। ধসে পড়া গর্তের ওপরটা যেমন খোলা, তেমনি তলদেশেও আছে ছিদ্র। এতে সাগরের জলে এই পথে সহজেই আসা-যাওয়া করতে পারে। ভাটার সময় পানি ধীরে ধীরে বয়ে গর্তটিকে পূর্ণ করে দেয়। জোয়ারের সময় প্রবল বেগে যেমন ভেতরে পানি ঢোকে, তেমনি নিচের গর্ত দিয়ে প্রচণ্ড গতিতে বেরিয়ে আসা পানি একে অনেকটা গেইজারের চেহারা দেয়। আর প্রতিনিয়ত চলতে থাকা পানি ভরা আর খালি হওয়ার প্রক্রিয়া দেখে মানুষ বিভ্রান্ত হয়, ভাবে এখান দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের বিপুল পানি কোথাও চলে যাচ্ছে।
গর্তের আশপাশের সাগরজলের প্রবল স্রোতে ভেসে যাওয়ার কিংবা গর্তে পড়ার ঘটনা ঘটে কখনো কখনো। চোরা ঢেউয়ের বিষয়েও সতর্ক থাকতে হয় দর্শনার্থীদের। তীর থেকে এগুলোকে সব সময় ঠাহর করা যায় না। কাছ থেকে থর’স ওয়েল দেখতে থাকা পর্যটকদের আচমকা টেনে নিতে পারে এ ধরনের ঢেউ।
এবার বরং গর্তটি এমন নাম কেন পেল তা জেনে নেওয়া যাক। নর্সদের (মধ্যযুগে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে বাস করা জনগোষ্ঠী) বজ্রদেবতা থরের নামে রাখা হয়েছে ভয়ালদর্শন গর্তটির নাম। স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে অরিগন উপকূলের এই এলাকায় থর বজ্রের আঘাত হানেন, আর এতেই বিশাল গর্তটির সৃষ্টি হয়।
জোয়ার কিংবা ঝড়ের সময় থর’স ওয়েল রূপের ডালি মেলে দেয়। এ সময় পাথরের ওপর দিয়ে আসা ফুঁসতে থাকা পানি গর্তে ঢোকে কিংবা গর্ত থেকে বের হয়ে যায়। তবে তখন বেশি কাছাকাছি গেলে ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তার পরও প্রকৃতিপ্রেমিক ও আলোকচিত্রীরা এর কাছে ভিড় জমান এই বিপজ্জনক সময়ে। তবে এমনিতে এখানে যাওয়ার সেরা সময় জোয়ারের এক ঘণ্টা আগে। এ সময় পানি কম থাকে। তখন গর্তটিতে পানি পূর্ণ হওয়ার ও বের হওয়ার প্রক্রিয়াটি উপভোগ করতে পারবেন।
সূত্র: দ্য অরিগন লাইফ ডট কম, এটলাস অবসকিউরা, টাইমস অব ইন্ডিয়া