
বহু বছর আগের শীতের এক সন্ধ্যা। ক্লাস সিক্স কী সেভেনে পড়ি। সবে শেষ করেছি সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত রকিব হাসানের রূপান্তর করা ব্রাম স্টোকারের পিশাচ কাহিনি ‘ড্রাকুলা’। খাট লাগোয়া জানালায় চোখ পড়তেই হঠাৎ মনে হলো পর্দাটা নড়ে উঠেছে। চোখ বন্ধ করে ফেললাম, মনে হলো ওপাশে এখনই হয়তো দেখা যাবে সাদা ফ্যাকাশে একটি মুখ, ঠোঁটের দুপাশ থেকে বেরিয়ে এসেছে তীক্ষ্ণ দুটি দাঁত।
সত্যি বলতে, প্রথমবার ‘ড্রাকুলা’ পড়ার পরের কয়েকটা দিন এমনটা হয়েছে বারবার। ওয়াশরুমে গিয়ে রাতে বারবারই চোখ চলে গেছে জানালায়, পাছে আবার কোনো ভ্যাম্পায়ার চেহারা দেখায়। এমনকি রাতে ড্রাকুলার দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে ওঠার ঘটনাও ঘটেছে। আমার মনে হয় এই অভিজ্ঞতা ‘ড্রাকুলা’ পড়ার পর হয়েছে অনেকেরই।
১৮৯৭ সালে ড্রাকুলা চরিত্রটির জন্ম, অর্থাৎ বই প্রকাশের পর এটি যেমন পাঠকদের মনে ভালোলাগা মেশানো এক আতঙ্কের অনুভূতি ছড়িয়ে দিয়েছিল, সেটা অটুট আছে ১২৬ বছর পরও। ১৯১২ সালের আজকের দিনে, অর্থাৎ ২০ এপ্রিল পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন ড্রাকুলার স্রষ্টা ব্রাম স্টোকার। আজ তাই থাকছে ড্রাকুলা ও ব্রাম স্টোকার নিয়ে জানা-অজানা কিছু তথ্য।

১. ভিক্টোরিয়ান যুগের আরও অনেক উপন্যাসের মতো ‘ড্রাকুলা’ লেখার পেছনে সম্ভবত কোনো দুঃস্বপ্নই ‘ড্রাকুলা’ লেখার চিন্তাভাবনা মাথায় আনে স্টোকারের। জীবনীকার হ্যারি লুডলামের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ব্রাম স্টোকার বলেছিলেন, এক ভ্যাম্পায়ার সর্দারের কফিন থেকে জেগে ওঠার স্বপ্ন দেখার পরে এ ধরনের একটি কিছু লিখতে উৎসাহী হয়ে ওঠেন।
২. ব্রাম স্টোকার ‘ড্রাকুলা’ লেখা শুরু করেন ১৮৯০ সালে, জ্যাক দ্য রিপার লন্ডনে আতঙ্ক ছড়ানোর দুই বছর বাদে। জ্যাক দ্য রিপারের হত্যাকাণ্ডগুলো যে ধরনের একটি ভয়াবহ পরিবেশ তৈরি করে, সেটির প্রভাব পড়ে ‘ড্রাকুলা’ বইয়ে। ১৯০১ সালে ‘ড্রাকুলা’র আইসল্যান্ডিক সংস্করণের মুখবন্ধে বাস্তবের ও কল্পনার দুটি চরিত্রকে যেভাবে উপস্থাপন করেন, তাতে মনে হয় জ্যাক দা রিপারের প্রভাব স্পষ্ট ড্রাকুলার কল্পনার ভীতিকর রাজ্য তৈরিতে।

৪. তবে বেশির ভাগের ধারণা ড্রাকুলা চরিত্রটি ব্রাম স্টোকার তৈরি করেন ওয়ালেচিয়ার (বর্তমানে রোমানিয়ার অংশ) শাসক ভ্লাদ ড্রাকুলায় অনুপ্রাণিত হয়ে। ভ্লাদ দ্য ইম্পেরর নামেও পরিচিত ছিলেন তিনি। কথিত আছে, তাঁর শত্রুদের প্রচণ্ড অত্যাচার করতেন ভ্লাদ দ্য ইম্পেরর।
৬. অনেক সমালোচকের ধারণা, ট্রানসিলভানিয়ায় ড্রাকুলার প্রাসাদ দুর্গটিকে স্টোকার উপস্থাপন করছেন স্কটল্যান্ডের একটা প্রাসাদে অনুপ্রাণিত হয়ে। স্লেইনস ক্যাসল নামের প্রাসাদটির কাছের ক্রাডেন বেতে অনেকগুলো গ্রীষ্ম কাটিয়েছিলেন স্টোকার। আশপাশের এলাকা ও একটি পাহাড়ে ওই প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে ভালোই পরিচিত ছিলেন তিনি।
৯. মজার ঘটনা, পিশাচ কাহিনিটির প্রথম মঞ্চায়ন উপন্যাসটি প্রকাশের বেশ আগে। ১৮৯৭ সালের ২৬ মে প্রকাশিত হয় ‘ড্রাকুলা’। তবে এর আট দিন আগে ১৮ মে স্টোকার উপন্যাসটির মঞ্চায়ন করেন। এটা করেন উপন্যাসটির প্রচারের পাশাপাশি নিজের সৃষ্টির সত্ত্ব নিয়ে যেন জটিলতায় না পড়েন তা নিশ্চিত করতে।
সূত্র: মেন্টাল ফ্লস, ইন্টারেস্টিং লিটারেচার ডট কম