অনলাইন ডেস্ক
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির একটি গ্রিনহাউস। বাইরে দাঁড়িয়ে শতাধিক মানুষ। এসব মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন মূলত এমন একটি বিরল ও বিপন্ন উদ্ভিদের ফুলের ঘ্রাণ নেওয়ার জন্য। এই গন্ধ অনেকটাই পচা মাংসের মতো বা ঘামে স্যাঁতসেঁতে মোজা কিংবা পচা আবর্জনার মতোও মনে হয়।
লম্বা, সুচালো এবং গন্ধযুক্ত এই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যামরফোফ্যালাস টাইটানাম। এটি ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রার রেইন ফরেস্টে ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। তবে এটির স্থানীয় নাম বুঙ্গা ব্যাংকাই। আর ভক্তদের কাছে এই বিশেষ প্রজাতির নাম পুট্রিশিয়া। এই উদ্ভিদের ভক্তরা নিজেদের পুট্রিশিয়ানস বলে দাবি করেন।
গত এক সপ্তাহ ধরে এই উদ্ভিদকে রয়্যাল সিডনি বোটানিক গার্ডেনে প্রদর্শন করা হয়। খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পুট্রিশিয়া দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং প্রায় ২০ হাজার মানুষ এটিকে একনজর দেখতে হাজির হয়। ১৫ বছর পর এই উদ্ভিদ প্রথমবার এই বাগানে ফুটেছে। ধারণা করা হয়, বন্য পরিবেশেও এই উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা মাত্র ৩০০ এবং অনেকে শখের বসে দু-একটি করে নিজেদের বাগানে লাগিয়েছেন। সব মিলিয়ে সারা বিশ্বে ১ হাজারের মতো গাছ টিকে আছে। প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতি ৭-১০ বছরে একবার ফুল ফোটে এই প্রজাতিটিতে।
বাগানের মুখপাত্র সোফি ড্যানিয়েল বলেন, ‘এটি খুব বিরল ফুল। এটির টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। যখন এগুলোতে ফুল ফোটে, তখন এই প্রজাতিগুলোর আশপাশে যদি অন্য একটি ফুল না ফুটলে এগুলোর পরাগায়ন হয় না। কারণ, এগুলো স্ব-পরাগায়নে সক্ষম নয়।’
সিডনির বাগানটিতে পুট্রিশিয়া গাছটি আছে প্রায় সাত বছর ধরে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে গাছটির উচ্চতা ছিল মাত্র ২৫ সেন্টিমিটার (১০ ইঞ্চি)। তবে এরপর দ্রুত গাছটি বাড়তে থাকে। গত বৃহস্পতিবার এটির উচ্চতা দাঁড়ায় ১.৬ মিটার (৫ ফুট ৩ ইঞ্চি)।
সিডনিতে এই ফুল ফোটার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাগানের কর্মীরা ভিড় সামলাতে ব্যবস্থা নেন। পুরো পরিবেশটি যেন একটি রক কনসার্টের রূপ নেয়। ভক্তরা গাছটির সঙ্গে সেলফি তোলেন এবং ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করেন। সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের বিজ্ঞান প্রতিবেদক অ্যাঙ্গাস ড্যালটন বলেন, ‘ঘ্রানটা এতটাই ভয়ংকর যে, অনেক মানুষই রাতের খাবারের পরিকল্পনা বাতিল করেছে।’ বাগানের মুখপাত্র ড্যানিয়েল বলেন, ‘শুরুতে আমরা ভেবেছিলাম যে, কামরায় বমির ব্যাগ রাখা উচিত। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা তা রাখিনি। কেউ শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।’
ফুলটি পুরোপুরি ফোটার পর পরিবেশের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত এটি বাড়তে থাকে। এই পর্যায়ে এসে পচা মাংসের গন্ধ আরও ব্যাপকভাবে ছড়ায়। এর ফলে মাছি ও ক্যারিয়ন বিটল আকৃষ্ট হয় এবং এগুলো ফুলটির ভেতরে ডিম পাড়ে। এরপর কৃত্রিমভাবে পরাগায়ন ঘটানো হয়।