রোমানিয়ার ট্রান্সসিলভানিয়াকে মানুষ এক নামে চেনে ব্রাম স্টোকারের বিখ্যাত পিশাচ কাহিনির কাউন্ট ড্রাকুলার প্রাসাদের জন্য। তবে অনেকেরই জানা নেই ট্রান্সসিলভানিয়ায় রহস্যময় এক অরণ্যও আছে। অনেকের মতে, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ভুতুড়ে জঙ্গল।
রোমানিয়ার উত্তর সীমান্তে ক্লাজ-নাপোকা শহরের ঠিক বাইরে জঙ্গলটির অবস্থান। ট্রান্সসিলভানিয়া অঞ্চলের প্রায় ২৫০ একর জায়গা নিয়ে অরণ্যটি। নানা ধরনের ব্যাখ্যার অতীত, অতিপ্রাকৃত ঘটনা ঘটার দাবি করেন সেখানে যাওয়া মানুষ।
অনেকেই হইয়া-বাচুকে পরিচয় করিয়ে দেন ট্রান্সসিলভানিয়ার বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নামে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে যেমন রহস্যজনকভাবে জাহাজ হারিয়ে যায়, তেমনি হইয়া-বাচু থেকে হারিয়ে যায় জলজ্যান্ত মানুষ। কেউ কেউ আবার ফিরেও এসেছেন। নানা ভুতুড়ে ঘটনার পাশাপাশি ভিনগ্রহের মানুষের আনাগোনার গুজবও আছে একে নিয়ে। আবার যারা জঙ্গলে ঢোকেন বলেন, হঠাৎ নিশ্চুপ হয়ে যায় চারপাশ। তারপর শোনা যায় পায়ের শব্দ, কিন্তু কাউকে দেখা যায় না।
জঙ্গলটির কুখ্যাতি অর্জনের শুরু ১৯৬০-এর দশকে। এ সময় আলেক্সান্ডার সিফট নামের এক জীববিজ্ঞানী জঙ্গলটির ওপরের আকাশে ভাসমান এক বস্তুর ছবি তোলেন। তার পরই একের পর এক রহস্যময় ঘটনা ঘটতে শুরু করে জঙ্গলটিকে ঘিরে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ২০০ ভেড়াসহ এর রাখাল জঙ্গল থেকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ঘটনা। কখনোই খোঁজ পাওয়া যায়নি আর তাদের।
অনেকে আবার দাবি করেন, এই জঙ্গল থেকে ঘুরে আসার পর তাদের নানা ধরনের সমস্যা হয়েছে। যেমন শরীরে পোড়ার ক্ষত, চামড়ায় ফুসকুড়ি, মাথাব্যথা, অপ্রত্যাশিত প্রচণ্ড জ্বর ইত্যাদি। অথচ এসব সমস্যা আগে কখনো ছিল না তাঁদের। কিছু কিছু গবেষণায় ওই জঙ্গলে ইউরেনিয়ামের উপস্থিতির কারণে অস্বাভাবিক তেজস্ক্রিয়তা সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। এ কারণে এর ভেতরে ঢোকা মানুষ নানা ধরনের সমস্যায় পড়েন বলেও ধারণা করেন কেউ কেউ।
এমনকি হইয়া-বাচুর গাছপালাগুলোও মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। এখানে ২০০ বছরের পুরোনো গাছ দেখে কখনোই মনে হবে না এদের বয়স এত হয়েছে। অনেক গাছের কাণ্ড থেকেই বেঁকে গেছে। এ ছাড়া জঙ্গলের বেশির ভাগ গাছের আকৃতিতে অস্বাভাবিকতা আছে।
বিভিন্ন ছবিতে জঙ্গলের মধ্যে অদ্ভুত আলো ও রহস্যময় গোলাকার কিছুর উপস্থিতি শনাক্ত করা গেছে। সবকিছু মিলিয়ে অতিপ্রাকৃত ঘটনায় যারা আগ্রহী, তাঁদের প্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে জঙ্গলটি। অন্যদিকে বেশির ভাগ মানুষ আবার এখানকার ভুতুড়ে কাণ্ড-কীর্তির জন্য জায়গাটি এড়িয়ে চলেন।
আপনি যদি রোমাঞ্চপ্রেমী হন, যেতেই পারেন রোমানিয়ার রহস্যময় জঙ্গলটিতে। সেখানে যাওয়ার আগে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন ক্লাজ-নেপো শহরে। জঙ্গলে ঢোকার পর সেখানকার বিচিত্র সব আকারের গাছপালার মাঝখান দিয়ে হাইকিং যেমন করতে পারবেন, তেমনি ঘুরে বেড়াতে পারবেন সাইকেলে চেপে। তাহলে ড্রাকুলার ট্রান্সসিলভানিয়ার রহস্যময় অরণ্যটিতে একটি ভ্রমণ হতেই পারে, কী বলেন?
সূত্র: মাই বেস্ট প্লেস, এটলাস অবসকিউরা