দক্ষিণ নামিবিয়ার নামিব মরুভূমিতে দেখা পাবেন কোলমানস্কপ নামের শহরটির। এখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বেশ কিছু ঘর-বাড়ি। কিন্তু সেগুলোর ভেতরে কেবলই বালুর রাজত্ব। কোনো মানুষের বসতি নেই। এভাবে একে খালি করে কেন চলে গেল শহরটির বাসিন্দারা?
কোলমানস্কোপ আসলে পরিত্যক্ত এক হীরার খনির শহর। জাকারায়েস লওয়ালা নামের এক রেলশ্রমিক প্রথম হীরার খোঁজ পান এখানে। জাকারায়েস একে কেবল অস্বাভাবিক উজ্জ্বল একটি পাথর ভেবেছিলেন। রেলশ্রমিকদের সুপারভাইজার আগস্ট স্টচের কাছে নিয়ে যান তিনি পাথরটি। এটা যে মহামূল্যবান হীরা, বুঝতে বাকি রইল না তাঁর। দেরি না করে প্রসপেক্টরের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন স্টচ। ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া গেল সত্যি হীরার সন্ধান পাওয়া গেছে মরুতে।
বিপুল আশা নিয়ে মানুষ আসার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হতে লাগল দালানকোঠা। ওই সময় জায়গাটি ছিল কলোনিয়াল জার্মান দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার অংশ। ধনী ব্যক্তিরা মূলত জার্মান স্থাপত্যে অনুপ্রাণিত হয়ে বড় বড় বাড়ি তুলতে লাগলেন। তৈরি হলো বলরুম, ক্যাসিনো, নাট্যশালা, হাসপাতাল এমনকি মরুর বুকে বসল বরফ তৈরির কারখানাও। তৈরি হয় কসাইখানা, বেকারি, পোস্ট অফিস। বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি আসত ট্রেনে করে। খনি শহরটি তখন এতটাই রমরমা যে ইউরোপীয় নামি অপেরা দলগুলোও এখানে শো করতে আসত। মজার ঘটনা, এখানকার একটি পরিবার একটি উট পাখিও পুষত। যেটা শহরের মানুষদের বেশ আতঙ্কে রাখত।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ হীরা আরোহণ করা হলো মরুর বুক থেকে। বলা চলে, হীরার খনির জন্য বিপুল নাম হয়ে গেল শহরটির। তবে যুদ্ধের সময় হীরার দরপতন ঘটল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরও কয়েকটা বছর মোটামুটি ভালোই চলল। তারপর দেখা গেল হীরার ভান্ডার ফুরিয়ে এসেছে। এখানে বসতি গাড়া মানুষ বাড়ি-ঘর ফেলে অন্য জায়গায় পাড়ি জমাতে শুরু করল কাজের খোঁজে। এ ছাড়া একপর্যায়ে কোলমানস্কোপের দক্ষিণে অরেঞ্জমান্ডে বড় বড় হিরার খোঁজ মিলল। অনেকে সেখানেও চলে গেল। ১৯৫৬ সালের মধ্যে পুরো খালি হয়ে গেল শহরটি।
তবে শহরটি পরিত্যক্ত হওয়া মনেই যে সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়া তা নয়। এর অন্যরকম এক আকর্ষণ তৈরি হলো। সেটা পর্যটক ও আলোকচিত্রীদের কাছে। ধু-ধু বালুর রাজ্যে দাঁড়িয়ে থাকা ঘর-বাড়ি, সেগুলোর ভেতরে বালুর রাজত্ব—এসব দেখতে বছরে এখন ৩৫ হাজারের মতো মানুষ ভ্রমণ করে জায়গাটিতে।
নামিবিয়ার এই পরিত্যক্ত মরু শহরে পৌঁছাবেন কীভাবে? এর সবচেয়ে কাছের শহর লাডারিজ। কোলমানস্কোপের দূরত্ব সেখান থেকে মোটে ১০ কিলোমিটার। লাডারিজ থেকে বি৪ হাইওয়ে ধরে পৌঁছে যেতে পারবেন কোলমানস্কোপে। মানুষের ভিড়ে, কর্মব্যস্ততায় ভরপুর ছিল একসময় যেটি। এখন সেখানে কেবলই বালুর আধিপত্য।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ট্রাভেলেশনশিপ ডট কম, এটলাস অবসকিউরা