বিজ্ঞানীরা এক সময় ভেবেছিলেন আজ থেকে সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে ডাইনোসরদের সঙ্গে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে সিলিকান্থ মাছেরাও। কেবল মাত্র ফসিলই পাওয়া যাচ্ছিল। তারপরই ১৯৩৮ সালে জেলেদের জালে আটকে মারা যাওয়া একটি সিলিকান্থ মাছ পাওয়া গেল। আর তাতেই নিশ্চিত হলো মাছটি পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায়নি।
ঘটনাটা ১৯৩৮ সালের। দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্ট লন্ডন জাদুঘরের কিউরেটর ছিলেন ২৪ বছর বয়স্ক এক নারী, কোর্টনি লাটিমার। তাঁর কাজের অংশ হিসেবেই কোনো জেলের থেকে যদি খোঁজ পেতেন তাঁদের জালে অস্বাভাবিক কিছু ধরা পড়েছে, প্রাণীটার পরিচয় জানতে হাজির হয়ে যেতেন ঘাটে। ঠিক তেমনি একটি খবর পেলেন লাটিমার ১৯৩৮ সালের ২২ ডিসেম্বর, ক্যাপ্টেন হনড্রিক গুজেনের কাছ থেকে। মাছটির আকৃতি এবং রং চমকে দিয়েছিল তাঁদের।
তবে জাদুঘরে পৌঁছে হতাশই হতে হলো তাঁকে। রেফারেন্স বইগুলোতে এর সঙ্গে মেলে এমন কিছুর উপস্থিত শনাক্ত করতে ব্যর্থ হন। এদিকে জাদুঘরের চেয়ারম্যান এই আবিষ্কারকে সাগরের পাথুরে এলাকায় বাস করা সাধারণ কোনো মাছের বেশি কিছু মানতে নারাজ।
তবে নিজের বিশ্বাসে অটল লাটিমার মাছটির একটি আঁকা ছবি তাঁর বন্ধু রোডস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ও শখের মৎস্য বিজ্ঞানী জেএলবি স্মিথকে পাঠান। স্মিথ পরে স্মৃতিচারণা করেন, ‘এটা দেখেই আমার মনে হলো যেন মাথায় একটা বোমা ফেটেছে’।
গভীর সাগরের এই মাছ বিচরণ করতে পারে সাগরপৃষ্ঠের ২ হাজার ৩০০ মিটার নিচেও। দৈর্ঘ্যে পৌঁছাতে পারে সাড়ে ছয় ফুট পর্যন্ত, ওজন সর্বোচ্চ ১৯৮ পাউন্ড।
‘জীবন্ত ফসিল’ নামে পরিচিতি পাওয়া এই মাছেদের একটি বড় বৈশিষ্ট্য শরীরের বাইরের দিকে বেরিয়ে থাকা পাখনাদুটি। অবশ্য এদের শরীরে ফিন থাকে মোট চার জোড়া। এরা মুখটা বড় শিকার ধরার জন্য অনেকটুকু প্রসারিত করতে পারে। মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে তেল সমৃদ্ধ একটি টিউব। এদের শরীরের আঁশ বেশ পুরু।
এদিকে সংরক্ষণ ও পরিবেশ বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউজ প্ল্যাটফর্ম মোংগাবের সূত্রে জানা যায়, গত দশকগুলোতে সিলিকান্থ দেখা যাওয়ার বা ধরা পড়ার কারণ সাগরের মাছ শিকারিরা। এমনকি ১৯৩৮ সালে সেই সিলিকান্থটিরও খোঁজ মেলে মাদাগাস্কার দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের গভীর জলে, জেলেদের জালে আটকে যাওয়ায়।
এদিকে এক গবেষণা থেকে জানা যায় ২০২০ সালের মে পর্যন্ত ৩৩৪টি সিলিকান্থ ধরা পড়ার রেকর্ড আছে। মাছটিকে এখন চরম সংকটাপন্ন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বড় ধরনের জাল দিয়ে গভীর সাগরে শিকার অব্যাহত থাকলে সিলিকান্থ মাছেরা সত্যি সত্যি পৃথিবীর সাগর থেকে হারিয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, রয়টার্স, বিবিসি সায়েন্স ফোকাস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এল দেট ইন্টারেস্টিং