এমন একটি হীরার খনির কথা চিন্তা করুন তো, যেখানে চাইলেই বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে হীরার সন্ধানে নেমে পড়তে পারবেন। এমনকি এখানে কোনো হীরা পেলে সেটা সঙ্গে করে নিয়েও যেতে পারবেন। কেমন অবিশ্বাস্য শোনালেও মার্কিন মুল্লুকে এমন একটি খনি সত্যি আছে।
খনিটির অবস্থান আরকানসাস রাজ্যের মারফ্রিজবোরো এলাকায়। এর বর্তমান নাম অবশ্য ক্রেটার অব ডায়মন্ডস স্টেট পার্ক।
জন ওয়েসলি হাডলস্টন নামের এক ব্যক্তি কীভাবে আগ্নেয়গিরির রত্ন-সমৃদ্ধ মৃত জ্বালামুখে প্রথম হীরা খুঁজে পান এবং ‘ডায়মন্ড কিং’ বা ‘হীরক রাজা’ নামে পরিচিতি পেয়ে যান তা নিয়ে নানা ধরনের গল্প প্রচলিত আছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় সংস্করণটি বলছে, ঘটনার সূচনা ১৯০৬ সালে। মধ্যবয়সী, অশিক্ষিত কৃষক হাডলস্টন তাঁর ২৪৩ একরের খামারের শালগমখেতে কাজ করছিলেন। এ সময়ই দুটি অদ্ভুত ধরনের চকচকে হলুদ কিন্তু স্বচ্ছ পাথর খুঁজে পেলেন।
জিনিসগুলো আসলে কী সে সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়ায় গ্রাইন্ডিং হুইল দিয়ে পরীক্ষা করেন। তাঁকে বলা হয়েছিল এটি হীরা ছাড়া যেকোনো কিছুকে নির্দিষ্ট আকার দিতে পারে। তখনই খেয়াল করলেন পাথর দুটোর কিছু হয়নি, উল্টো এই চূর্ণ করার চাকার মধ্যে ক্ষত তৈরি করেছে। আর এ থেকে অনুমান করলেন হীরা পেয়ে গেছেন তিনি। এর দাম কেমন হতে পারে জানার জন্য কাছের শহর লিটল রকের এক স্বর্ণকারের কাছ পাঠালেন।
আনুমানিক ৩০০ কোটি বছর আগে শুরু হওয়া ধারাবাহিক ও নাটকীয় ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তন এবং ভয়ংকর আগ্নেয় কার্যকলাপের ফলাফল হিসেবে হীরার খনিটির জন্ম। পৃথিবীর ভূত্বকের নিচে ৬০ থেকে ১০০ মাইলের মধ্যে উচ্চ তাপমাত্রা এবং চাপ কার্বনকে হীরাতে রূপ দেয়। তারপরে প্রেইরি ক্রিক নামে পরিচিত আগ্নেয়গিরির ছিদ্র গঠনের সময় গ্যাস এবং টুকরোসহ একটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণ এই পাথর এবং খনিজগুলোকে পৃথিবীর গভীর থেকে ওপরে নিয়ে আসে।
হীরার খনির খবর অনেক রত্নসন্ধানীকে মারফ্রিজবোরোতে নিয়ে আসে। সংবাদপত্রগুলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এলাকার হোটেলগুলোর কোনো কামরা খালি না থাকায় অনেককে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়।
কয়েকবার মালিকানা বদলের পর ১৯৭২ সালে আরকানসাস রাজ্যের পক্ষ থেকে হীরার খনিটি কিনে নেওয়া হয়। ৯১১ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠে ক্রেটার অব ডায়মন্ডস স্টেট পার্ক। এর মধ্যে দর্শনার্থীদের রত্ন অনুসন্ধানের জন্য উন্মুক্ত আছে ৩৭ একর এলাকা। আর ১৯৭২ সালের পর থেকে এই পার্কে মিলেছে ৩৫ হাজারের বেশি হীরা।
আবার হাডলস্টনের গল্পে ফিরে যাই। দ্রুতই সৌভাগ্য বিদায় নেয় তাঁর জীবন থেকে। অল্প সময়ের মধ্যে খনি বিক্রি করে পাওয়া টাকা উড়িয়ে দেন তিনি। ১৯৩৬ সালে মারা যান মোটামুটি কপর্দকহীন অবস্থায়। তবে তাঁকে স্মরণ করে যেখানে প্রথম হীরা খুঁজে পেয়েছিলেন হাডলস্টন, সে জায়গাটি চিহ্নিত করে রেখেছে পার্ক কর্তৃপক্ষ।
পার্ক এলাকায় দর্শনার্থীদের জন্য নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা আছে। যেমন হাঁটার জন্য পথ, বনভোজন ও ক্যাম্পিং করার জায়গা, উপহারের দোকান, রেস্তোরাঁ। আবার এখানে ডায়মন্ড স্প্রিং ওয়াটার পার্ক নামের যে জায়গাটি আছে, সেখানে গ্রীষ্মের উত্তপ্ত দিনে হীরা খুঁজে ক্লান্ত শরীরটাকে একটু শীতল করে নেওয়া যায়।
কোনো হীরা যদি খুঁজে পেয়েই যান, তবে এটি নথিবদ্ধ করে নিতে হবে। ও আরেকটা কথা, এখানে হীরা খুঁজতে কিন্তু টিকিট কাটতে হবে। টিকিটের দামটা খুব বেশি নয়। বড়দের জন্য ১০ ডলার, ছয় থেকে ১২ বছর যাদের বয়স তাদের জন্য ৬ ডলার আর বয়স ছয়ের নিচে হলে টিকিটই কাটতে হবে না। কাজেই ওয়েস্টার্ন বই পড়ে কিংবা সিনেমা দেখে যদি খোঁড়াখুঁড়ির একটা ভূত মাথায় চেপেই বসে, চলে যেতে পারেন আরকানসাসের এই হীরার খনিতে।
সূত্র: এটলাস অবসকিউরা, আরকানসাস স্টেট পার্কস