Ajker Patrika
হোম > নারী

বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীদের চোখে সৌদি পরিবার ও সংস্কৃতি

প্রমিতি কিবরিয়া ইসলাম, ঢাকা 

বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীদের চোখে সৌদি পরিবার ও সংস্কৃতি

ইসলামি সংস্কৃতির আঁতুড়ঘর হওয়ায় সৌদি আরবের পরিবারগুলোকে সাধারণত রক্ষণশীল বলে ভাবা হয়। কিন্তু সেখানে বাংলাদেশি কিছু গৃহকর্মীর বিবরণে ফুটে উঠেছে উল্টো চিত্র। 

তাঁদের ঘুম ভাঙে দেরিতে, দুপুরের দিকে। সন্ধ্যা থেকে খেতে শুরু করেন। পরিবারের সবাই মিলে সারা রাত খান আর গল্পগুজব করেন। সবাই অনেক খাবার সামনে নিয়ে বসেন, কিন্তু খান অল্প। তাঁদের বেঁচে যাওয়া খাবার ফেলে দেন। আর নারীদের বেশির ভাগই বোরকার নিচে পরেন শরীরের সঙ্গে লেপ্টে থাকা পশ্চিমা ঢংয়ের পোশাক। বিয়ের আসরে নারীরা হিন্দি গানের তালে ধুম নাচেন। 
 
সৌদি আরবের বিভিন্ন পরিবার নিয়ে এমন মন্তব্য একদল বাংলাদেশি নারীর, যারা দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। 

নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে সৌদি আরবের সঙ্গে নারী গৃহকর্মী পাঠানোর একটি চুক্তি করে। এই চুক্তির পর এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার নারী গৃহকর্মী সৌদি আরবে গেছেন। তবে এর আগে-পরে নানা পন্থায় আরও অনেক গৃহকর্মী সৌদি আরবে গেছেন, যাদের কোনো হিসাব সরকারের কাছে নেই। 

অভিযোগ আছে, সৌদি আরবে কর্মরত ৩৫ শতাংশ নারী শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হন। আর ৪৪ শতাংশ নারী নিয়মিত বেতন-ভাতা পান না। 

এরপরও অনেক নারী সেখানে আছেন, যাঁরা নতুন দেশে গিয়ে নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খেয়ে নিয়েছেন। আরবি ভাষায় তাঁরা অনর্গল কথা বলতে শিখেছেন। দেশটির জনপ্রিয় খাবার খেবসা, সাহো, গাওয়া ও লেবেনাসহ নানা পদের রান্না শিখেছেন। তাঁরা নিজের চেষ্টায় ভালো আয় করছেন। দেশে পরিবারের খরচ জোগাচ্ছেন। ইউটিউবে তাঁদের সংগ্রাম, দৈনন্দিন জীবন ও সৌদি আরবের সংস্কৃতিও তুলে ধরছেন। 

আসমা নামের এক গৃহকর্মী জানান, সেখানকার ঘরের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক প্রযুক্তিও তাঁরা ব্যবহার করতে শিখে গেছেন। আর কাজের ফাঁকে ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও তৈরি করেন, সেগুলো নিজেই এডিট করেন। 

ইউটিউবে ‘ঝর্ণা ভ্লগস’ নামের চ্যানেলটি চালান ঝর্ণা আক্তার নামের এক গৃহকর্মী। তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে সৌদি আরবে আছেন। পরিবার থেকে একরকম যুদ্ধ করেই তিনি সেখানে গেছেন। যে বাসায় কাজ করেন সেখানে পরিবারের একজন সদস্যের মতোই থাকেন। ভ্লগে ঝর্ণা বলেন, তিনি বেতন হিসেবে মাসে ১ হাজার ৭০০ রিয়েল পান, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। সেই টাকা জমিয়ে নিজের নামে সাভারে জমি কিনেছেন ঝর্ণা। 

নিজের ইউটিউব চ্যানেল প্রসঙ্গে ঝর্ণা বলেছেন, তাঁর গৃহকর্ত্রী (ম্যাডাম) নিজেই তাঁকে ইউটিউবে চ্যানেল খুলে দিয়েছেন। তবে সেই ভিডিওতে তিনি সৌদি পরিবারের কোনো সদস্যকে দেখান না, তাঁদের দেখানোর অনুমতিও নেই। ঝর্ণা তাঁর ভিডিওতে শুধু নিজের প্রতিদিনের কাজ আর মনের কথা বলেন। ঝর্ণা বলেন, কাজের ফাঁকে তিনি ভিডিও ধারণ করেন। কাজ শেষে ঘুমানোর আগে সেই ভিডিও সম্পাদন করে ইউটিউবে আপলোড করেন। 

সৌদি আরবের মানুষের জীবনধারা সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পাওয়া যায় ঝর্ণার ভ্লগে। তিনি বলেন, সৌদি পরিবারগুলোর বিয়ের অনুষ্ঠান খুব রাজকীয় হয়, এতে বিপুল অর্থ খরচ করা হয়। এসব বিয়েতে পুরুষ ও নারীরা আলাদা কক্ষে থেকে আনন্দ করেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে সবাই দামি পোশাক ও গয়না পরেন। নারীরা বোরকার নিচে দামি পশ্চিমা পোশাক পরে থাকেন। প্রতিটি বাসা থেকে নিজেরা সুস্বাদু খাবার বানিয়ে নিয়ে আসেন। সেখানে প্রধান খাবারের তালিকায় থাকে দুম্বার মাংস। সারা রাত ধরে বিয়ের অনুষ্ঠানে ছোট-বড় সবাই নেচেগেয়ে স্ফূর্তি করেন। বেশির ভাগই হিন্দি গানের তালে নাচেন। 

গত ফুটবল বিশ্বকাপের সময়ের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশি এক নারীর ভ্লগার বলেন, সেই বিশ্বকাপে সৌদি আরব আর্জেন্টিনাকে হারিয়েছিল। বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে সৌদি পরিবারে ছিল আনন্দের বন্যা। তাঁরা খাওয়াদাওয়া নিয়ে ঘরের বাইরে প্রজেক্টরে একসঙ্গে খেলা দেখা ও হইচই করেছেন। অন্যান্য দেশের মতো তাঁরাও কম আনন্দ করেননি। 

ঈদের সময় পরিবারগুলোর আয়োজন নিয়ে কথা বলেছেন আরেক বাংলাদেশি ভ্লগার। তিনি বলেন, পরিবারের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠের বাসায় গিয়ে সবাই ঈদ উদ্‌যাপন করেন। ঈদের সময় মেহমানদের জন্য বাসায় অনেক ধরনের মিষ্টি, চকলেট টেবিলে সাজিয়ে রাখা হয়। সুন্দরভাবে ঘর গোছানো হয়। 

জান্নাতুল শাম্মি নামে একজন গৃহকর্মী ইউটিউবে ভ্লগ করেন। ভ্লগে বলেন, তিনি তাঁর স্বামী–সন্তান ছেড়ে প্রবাসে আছেন। অবশ্য এখন তাদেরও আনার জন্য চেষ্টা করছেন। নিজের বাসার জন্য সোফা, খাট কিনে রেখেছেন। ইউটিউব থেকে তিনি প্রায় ৪৭ হাজার টাকা আয়ও করেছেন। 

পরিবার পরিজন ছেড়ে থাকা এই সংগ্রামী নারীরা নিজের দেশ ও পরিবারকে প্রায়ই স্মরণ করেন। ভিডিও বানিয়ে নিজেদের একাকিত্বকে ভুলে থাকার চেষ্টা করেন। ভিডিওর মাধ্যমে নিজের দেশের মানুষের সঙ্গে সংযোগ রাখেন। কেউ ভালো মন্তব্য করলে আনন্দে কেঁদে বুক ভাসান। 

সৌদি আরবে অবস্থানকারী এই বাংলাদেশি নারীরা খুবই আত্মবিশ্বাসী। তাঁরা এত পরিশ্রম করেও হাসিখুশি থাকেন, দেশে পরিবারের মানুষের মুখে হাসি ফোটান। আর সরকারে হিসাবের খাতায় যোগ হয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

আইনজীবীদের সাদাকালোর সীমানা পেরিয়ে মিতার গল্প

৯ মাসে নির্যাতনের শিকার ৯৯৩ কন্যাশিশু

প্রাণী, প্রকৃতি ও মানবতার আলোকবর্তিকা জেন মরিস গুডঅল

মহাকাশ থেকে সমুদ্রে বিচরণ করা একমাত্র মানুষ

যে মেলায় পুরুষদের ঢুকতে মানা, ক্রেতা শুধু নারীরাই

দেবী দুর্গার সূক্তের মন্ত্রদ্রষ্টা যে নারী: অম্ভৃণি

নারী হত্যা প্রতিরোধ আইন আজও নড়বড়ে

তরুণী নেতৃত্ব বিকাশের লক্ষ্যে কর্মশালা

হুমকিকে ভয় না পেয়ে আইনগত সহায়তা নিন

ঘর থেকে কর্মক্ষেত্র, পুরুষদের ছাপিয়ে নারী নেতৃত্ব