মমিনুল ইসলাম বাবু, চিলমারী (কুড়িগ্রাম)
বিবিসির প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকা প্রতিবছর রোমাঞ্চ জাগায়। এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি। সুসংবাদ হচ্ছে, এ বছরের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার নারী রিকতা আখতার বানু (লুৎফা)।
জলবায়ুকর্মী, সংস্কৃতি ও শিক্ষা, বিনোদন ও ক্রীড়া, রাজনীতি ও অ্যাডভোকেসি এবং বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি—এই পাঁচটি বিভাগে ১০০ জন নারী প্রতিবছর তালিকায় স্থান পান। বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি বিভাগে স্থান পেয়েছেন রিকতা আখতার বানু। বিবিসির এই তালিকায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের এমন সব নারীকে জায়গা দেওয়া হয়, যাঁরা কঠিন পরিস্থিতি ও প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে আসেন।
ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে চিলমারী জনপদ। বদল লাগলেও এখানে প্রতিবন্ধী শিশুদের অভিশাপ হিসেবেই দেখা হয় এখনো। তারা বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের শিকার হয় সমাজে। রিকতাও তাঁর সন্তান নিয়ে বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন। সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত তাঁর কন্যাসন্তানকে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানায়। এ ঘটনার পর ২০০৯ সালে তিনি নিজের জমি বিক্রি করে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। সেই স্কুলের নাম রিকতা আখতার বানু (লুৎফা) বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়।
রিকতার লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটি স্কুলে এখন তিন শর বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। শুধু তা-ই নয়, স্কুলটি প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। প্রাথমিকভাবে অটিস্টিক বা শেখার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা থাকা শিশুদের জন্য এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন স্কুলটি বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধিতা থাকা শিশুশিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করিয়ে থাকে।
মেয়ের কারণে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নারীদের তালিকায় আমাকে স্থান দিয়ে সম্মানিত করেছে বিবিসি। আমি আপ্লুত। তবে এই কৃতিত্ব আমার একার নয়।— রিকতা আখতার বানু
পেশাগত জীবনে চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ নার্স রিকতা। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের দক্ষিণ ধনঞ্জয় গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদের কন্যা তিনি। তাঁর স্বামীর বাড়ি চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের রমনা সরকারপাড়া গ্রামে। বর্তমানে স্বামী-সন্তান নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। তাঁর স্বামীর নাম আবু তারিক আলম।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের এক শ গুরুত্বপূর্ণ নারীর সঙ্গে নিজের নাম থাকায় আনন্দিত রিকতা। তিনি বলেন, ‘মেয়ের কারণে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নারীদের তালিকায় আমাকে স্থান দিয়ে সম্মানিত করেছে বিবিসি। আমি আপ্লুত। এই কৃতিত্ব শুধু আমার একার নয়। বিবিসি পরিবার, আমার জেলার সংবাদকর্মীসহ আমার কাজে উৎসাহ দেওয়া সকলের।’