Ajker Patrika
হোম > নারী

খুকুমণির সিকি-আধুলির জীবন

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী, মাদারীপুর

খুকুমণির সিকি-আধুলির জীবন

খুকুমণি নামটি শুনলে কেমন আদুরে মনে হয়! কিন্তু জীবনের অনেকটা সময় এই খুকুমণির আদর-আহ্লাদ খুব একটা জোটেনি কপালে। ছোটবেলা থেকে অভাবের সংসারে বড় হয়েছেন। বাবার সংসারে সেই যুদ্ধ শেষ হলেও দীর্ঘকাল চলেছে স্বামীর সংসারে। বাক্‌প্রতিবন্ধী স্বামী আর সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে গড়ে তুলেছেন মুদিদোকান। তিল তিল করে গড়ে তোলা সেই দোকান এখন খুপরি ছেড়ে বড় হয়েছে। খুকুমণির সিকি-আধুলির জীবনে খানিক স্বস্তি মিলেছে। 

ভোরে উঠে সংসারের রান্নাবান্নাসহ যাবতীয় কাজ শেষ করে দোকান খুলে বসেন খুকুমণি। বাক্‌প্রতিবন্ধী স্বামী ভ্যানগাড়ি চালানোর অবসরে দোকানে সময় দেন। তিন ছেলেমেয়ে, স্বামীসহ প্রতিদিন সংগ্রামে নামেন খুকুমণি। এভাবে কয়েক বছর ধরে তিনি একটু একটু করে বড় করেছেন নিজের দোকান। এরপর খুপরি ছেড়ে শহরের ২ নম্বর শকুনি এলাকায় একটি বড় দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মালপত্র রয়েছে এতে। লাভও হয় বেশ ভালোই। তবে টাকার অভাবে দোকান আর বড় করতে পারছেন না। এ এক অনন্ত যুদ্ধ! তাঁর সেই দোকানে বসে নিতান্তই আটপৌরে টাকাপয়সার আলাপ করতে করতে খুকুমণি ফিরে যান তাঁর কিশোরীবেলায়।

মাদারীপুর শহরের ২ নম্বর শকুনি এলাকার আবদুল আজিজ ব্যাপারীর মেয়ে খুকুমণি। বাবা শহরের ডিসি ব্রিজ এলাকায় একটি খুপরি দোকানে তাবিজ, মাছ ধরার বড়শিসহ ছোটখাটো নানা জিনিস বিক্রি করতেন। সেই শিশু বয়স থেকে খুকুমণি বাবার দোকানে বসে বেচাবিক্রিতে তাঁকে সাহায্য করেছেন। কিশোরী বয়সে বাক্‌প্রতিবন্ধী বাবুল মুনশির সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। এক অভাবের সংসার থেকে গিয়ে পড়েন অন্য অভাবের সংসারে। স্বামী বাক্‌প্রতিবন্ধী হওয়ায় রোজগারের কোনো ঠিকঠিকানা ছিল না। যখন যা পেতেন, তা-ই করে যৎসামান্য আয় করতেন। সেই টাকায় সংসার চলত না। এই টানাপোড়েনের জীবন থেকে খুকুমণির বাবা আবদুল আজিজ ব্যাপারী ছুটি নেন একসময়। কিন্তু সময় তো থেমে থাকে না। খুকুরও থাকেনি।

বিয়ের দুই বছর পর তাঁর কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক মেয়ে। সংসারে আনন্দের পাশাপাশি নেমে আসে দুশ্চিন্তার ঘন অন্ধকার। মেয়েকে কী খাওয়াবেন? চিন্তা ঘুরতে থাকে খুকুর মাথায়। বাবার সঙ্গে দোকান করার স্মৃতি সঙ্গী করে, নিজের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় শহরের ডিসি ব্রিজ এলাকায় ছোট্ট একটি দোকান ভাড়া নেন। মাত্র তিন থেকে চার হাজার টাকা বিনিয়োগে চিপস, বিস্কুট, চকলেট আর পান-সুপারি নিয়ে বসে যান দোকানে। কঠোর পরিশ্রমে একটু একটু করে দোকানটি বড় করতে থাকেন।

কয়েক বছর পর এক ছেলে ও আরেক মেয়ে হয় খুকুমণির। বড় মেয়ে ফারজানা আক্তারের বিয়ে হয় সময়ের প্রবাহে। কিন্তু মানসিক সমস্যার জন্য তাঁর সংসার বেশি দিন টেকেনি। তাই বাধ্য হয়ে মা-বাবার সংসারে ফিরে আসতে হয়েছে ফারজানাকে। ছেলে মিরাজ এসএসসি পাস করেছে। ছোট মেয়ে রুপালী পড়াশোনা করছে স্কুলে। খুকুমণির জীবনের সময়গুলো যদি ছুঁয়ে দেখি, সেখানে সন্তানদের সঙ্গে বড় হচ্ছে তাঁর দোকান। সেটি এখন খুপরি থেকে মুদিদোকানে পরিণত হয়েছে।

খুকুমণির স্বপ্ন, একদিন এই দোকান আরও বড় হবে। সেখানে থাকবে সব ধরনের মনিহারি জিনিস। মন হরণ করে নেবে মানুষের। ছেলেমেয়েরা আরও বড় হবে। চাকরি করে নিজেরাই উপার্জন করবে। স্বামীর ভিটায় উঠবে একটি পাকা ঘর! আর আমরা দেখব, সিকি-আধুলির জীবন ছেড়ে খুকুমণি আরও খানিক স্বস্তিময় জীবন উপভোগ করছেন।

‘কর্মক্ষেত্রে নিজেদের তৈরি করে নিতে হবে’

জান্নাতুলের সাহসী উদ্যোগ

দানবীর মেরি গ্যারেট

মৃত্যুদণ্ড দিয়ে নারী সহিংসতা রোধের প্রমাণ নেই: ব্যারিস্টার সারা হোসেন

বড় হচ্ছে শিশুসাহিত্যের রঙিন ভুবন

কাজের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা গুরুত্বপূর্ণ

থ্রিলারের জগতে নারীরা

৩৫টি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে যাঁর বই

গাড়ির উইন্ডশিল্ড ওয়াইপার আবিষ্কারকের জন্মদিন আজ

নিজের প্রশংসা করুন সাফল্য উদ্‌যাপন করুন