‘আমি একজন ভারতীয়। আমি দাস হতে চাই না। তবে কেন আমি এ গান গাইব?’ এ কথা বলে স্কুলের প্রার্থনাসংগীত গাইতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন সন্তোষ কুমারী দেবী। পরবর্তীকালে বাংলার চটকলশ্রমিকদের কাছে তিনি ‘বীর মা’ তথা মাইরাম নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ভারত উপমহাদেশের বাংলা অঞ্চলের সাধারণ মানুষ তখন অত্যাচারিত। নীল চাষে বাধ্য কৃষকদের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব। থেমে ছিল না মফস্বলের চটকলশ্রমিকেরাও। একসময় আট ঘণ্টা কাজ আর আর্থিক সুবিধার দাবিতে তাঁরা কাজ বন্ধ করে দেন। একদিকে মালিকপক্ষ অনড়, অন্যদিকে ধর্মঘট চলছে। শ্রমিকদের নেতৃত্ব দেওয়ার কেউ নেই। সে সময় শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ান সন্তোষ কুমারী দেবী। ১৯২৩ সালে তিনি গরিফায় তাঁর বাড়ির কাছে চটকলশ্রমিক সংগঠন গৌরীপুর শ্রমিক সমিতি গড়ে তোলেন। ১৯২৪ সালে আরও অনেকের সঙ্গে মিলে গড়ে তোলেন বেঙ্গল জুট ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন। ১৯২২ থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত চটকলশ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লড়াই চালিয়ে যান তিনি। চটকলশ্রমিকদের সংগঠিত করে গড়েছিলেন ইউনিয়ন। এভাবেই শ্রমিকদের আশ্রয় হয়ে ওঠেন সন্তোষ কুমারী। ১৯২৪ সালের দিকে সাপ্তাহিক ‘শ্রমিক পত্রিকা’ সম্পাদনা করেছেন তিনি।
প্রখ্যাত অধ্যাপক সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বিকিকিনির হাট’ উপন্যাসটি গড়ে উঠেছিল সন্তোষ কুমারীর জীবন অবলম্বনে। এই শ্রমিক নেত্রী ১৯৮৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মারা যান।