সময়টা ১৯৮৫ সাল। ম্যাগাজিন, পত্রপত্রিকা পড়ে কেক তৈরির নতুন নতুন রেসিপি জানতে শুরু করেন ফেরদৌসী হাবিব। অল্পস্বল্প কেকও বানান। পরিচিতজনেরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর বানানো কেক নিতে থাকেন। এখন সিলেট শহরে তাঁর দুটি আউটলেট। সেখান থেকে মাসশেষে আয় লাখ টাকার বেশি। তাঁর প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন ২৬ জন। তাঁদের মধ্যে ১৬ জন নারী। এ ছাড়া কেক তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছেন প্রায় ৬০০ জন নারীকে।
ফেরদৌসীর কেক তৈরির আগ্রহটা জোরালো হলো যখন তিনি সিলেট শহরে থাকা শুরু করেন। তত দিনে সন্তানেরা বড় হয়ে গেছেন। ২০১১ সালে তিনি ‘ফেরদৌসীস কেক’ নামে ফেসবুকে একটি পেজ খোলেন। তখন কেক তৈরির কাঁচামাল সহজলভ্য ছিল না মোটেও। পথ সহজ না হলেও ফেরদৌসী ছিলেন অদম্য। কোনো সমস্যাই তাঁকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারেনি। স্বাদ ও ডিজাইনের ভিন্নতার কারণে অল্পদিনেই তাঁর তৈরি কেক সিলেটে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
নিজে যেমন কেক বানাতে পছন্দ করেন, তেমনি অন্যদের শেখাতেও আনন্দ পান। ২০১৪ সালে ‘ফেরদৌসীস কুকিং একাডেমি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করে অন্যদের শেখাতে শুরু করেন কেক বানানো। অর্ডারের কেক বাসায় না করে কুকিং একাডেমিতে তৈরি করতে শুরু করেন।
২০১৭-১৮ সালের দিকে ফেরদৗসীর ব্যবসার মোড় ঘুরে যায়। ২০১৭ সালে সিলেটের এক মেলায় অংশ নেন। তিন দিনের সেই মেলায় অনেক অর্ডার পান, যা ডেলিভারি দিতে হিমশিম খান। ফেরদৌসী জানান, সেই মেলায় মানুষের ব্যাপক সাড়া ও ভালোবাসা তাঁকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছে। ২০১৮ সালের মার্চে সিলেটের ধোপাদীঘির পাড়ে প্রথম আউটলেট এবং এক বছরের মাথায় দ্বিতীয় আউটলেট চালু হয় সিলেটের আম্বরখানায় আর্কেডিয়া ফুড কোর্টে।
পৃথিবীতে যাঁরা বেকিংয়ের সঙ্গে জড়িত, ৯-১০ ফুট উচ্চতার বিশাল কেক তৈরি করা তাঁদের কাছে স্বপ্নের বিষয়। বেকার হিসেবে ফেরদৌসীও এর বাইরে নন। তিন বছরে তিনটি বড় আকারের কেক সফলভাবে তৈরি ও সরবরাহ করেন তিনি। ফেরদৌসীর বেকার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন অবশ্য এর পরে আসে। প্রথম তিনটির পরে তিনি আরও দুটি কেক তৈরি করেন। যেগুলোর জন্য তাঁকে ২০৭ ও ৩৫০ কেজি কেক বেক করতে হয়। এর মধ্যে একটি কেকের উচ্চতা ছিল সাড়ে ৭ ফুট। সাদা, নীল ও রুপালি রঙের সেই কেকের সবকিছু মিলিয়ে প্রায় ৬০০ কেজি ছিল। ৭০০ কেজির কেকটি ছিল সাদা ও গোলাপি রঙের। গোথিক স্টাইলে তৈরি সেই কেকের উচ্চতা ছিল ৯ ফুট। কেকটিতে বেক ছিল ৩৫০ কেজি, বাটার ক্রিম ১০০ থেকে ১২০ কেজি, ফন্ডেন্ট ৭০ থেকে ৭৫ কেজি, এডিবল ফ্লাওয়ার প্রায় ৫০ কেজি আর ভেতরের কাঠামোতে ছিল ১৫০ কেজির বিভিন্ন উপকরণ।
ফেরদৌসী জানান, সেগুলো ছিল ফেরদৌসীস কেক টিমের অক্লান্ত পরিশ্রম আর আন্তরিকতার ফসল। ফেরদৌসীর তৈরি ৭০০ কেজির কেক দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কেক—এমনটাই জানিয়েছেন দেশের বেকিং জগতের মানুষ।