বহুকাল আগে ইকারোস মহাকাশে উড়েছিলেন পিঠে মোম আর পাখির পালকের তৈরি ডানা লাগিয়ে। মহাশূন্যের মহারহস্যভেদের প্রথম গল্প হিসেবে এটির কথাই বলা হয়। ইকারোস ছিলেন পুরুষ। ধীরে ধীরে মহাশূন্যের রহস্যভেদে নারীরাও অবদান রাখতে শুরু করে।
সেই ষাটের দশক থেকে এ বছর পর্যন্ত মহাকাশ অন্বেষণে বেশ কয়েকজন নারী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। নারী নভোচারীরা মহাকাশ শাটল, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) এমনকি ভবিষ্যতে চাঁদ ও মঙ্গল মিশনের জন্যও প্রস্তুত হচ্ছেন। মহাকাশে নারীদের অংশগ্রহণের কিছু মাইলফলক রইল এখানে।
মহাকাশে প্রথম নারী
ভ্যালেন্তিনা তেরেশকোভা। সোভিয়েত ইউনিয়নের অধিবাসী তেরেশকোভা ১৬ জুন, ১৯৬৩ সালে ভস্তক ৬ নভোযানে মহাকাশে গিয়েছিলেন। তিন দিনের মিশনে তিনি পৃথিবীকে ৪৮ বার প্রদক্ষিণ করেছিলেন। তাঁর এই অর্জনের পর মহাকাশে আরেকজন নারীর যেতে প্রায় দুই দশক সময় লেগেছিল।
এই রেকর্ডও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের। নভোচারী ছিলেন স্ভেতলানা সাভিৎস্কায়া। ১৯৮২ সালে সয়ুজ টি-৭ মহাকাশযানে তিনি মহাকাশে যান। ১৯৮৪ সালে তিনি প্রথম নারী হিসেবে মহাকাশে হাঁটেন।
প্রথম আমেরিকান নারী
স্যালি রাইড। ১৮ জুন ১৯৮৩ সালে স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জারে এসটিএস-৭ মিশনে মহাকাশে যান। তাঁর এই উড়ান আমেরিকান নারীদের মহাকাশযাত্রার সব বাধা ভেঙে দিয়েছিল।
মহাকাশ ভ্রমণে প্রথম বেসামরিক নারী
১৯৮৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলশিক্ষক ক্রিস্টা ম্যাকঅলিফকে টিচার ইন স্পেস প্রোগ্রামের জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল। তিনি চ্যালেঞ্জার দুর্ঘটনায় বাকি ক্রু সদস্যদের সঙ্গে নিহত হন।
প্রথম ব্রিটিশ নারী
শারম্যান সয়ুজ টিএম-১২ মহাকাশযানে মির মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন ১৯৯১ সালে।
মহাকাশে আরও যত প্রথম
প্রথম জাপানি নারী
চিয়াকি মুকাই। ১৯৯৪ সালে তিনি স্পেস শাটলে মহাকাশে গিয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালে তিনি আবারও মহাকাশে যান। মহাকাশে মেডিকেল পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন চিয়াকি।
প্রথম ফরাসি নারী
ক্লডি হাইনের। তিনি ১৯৯৬ সালে সয়ুজ টিএম-২৪ এবং পরে ২০০১ সালে আইএসএস উড়ান দেন মহাকাশে।
কল্পনা চাওলা। ১৯৯৭ সালে এসটিএস-৮৭ মিশনে কলম্বিয়া শাটলে উড়াল দিয়েছিলেন মহাকাশে। দ্বিতীয়বার ২০০৩ সালে কলম্বিয়া মহাকাশযান দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন।
ইরানি-মার্কিন নারী
আনুশেহ আনসারি। ২০০৬ সালে তিনি প্রথম বেসরকারি নারী মহাকাশ অভিযাত্রী এবং ইরানি-মার্কিন নভোচারী হিসেবে সয়ুজে চড়ে মহাকাশ স্টেশনে যান।
প্রথম ইতালীয় নারী
সামান্থা ক্রিস্টোফোরেটি। ২০১৪ সালে তিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ মিশনে অংশ নেন এবং ১৯৯ দিন মহাকাশে কাটানোর রেকর্ড করেন।
ইউলিয়া পেরেসিল্ড। তিনি রাশিয়ার অধিবাসী। ২০২১ সালে একটি রাশিয়ান সিনেমার দৃশ্য ধারণ করতে ১২ দিন মহাকাশ স্টেশনে কাটিয়েছিলেন ইউলিয়া।
সবচেয়ে বয়স্ক নারী
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালি ফাঙ্ক। ৮২ বছর বয়সে ব্লু অরিজিন এন্টারপ্রাইজের নিউ শেপার্ড মহাকাশযানে ২০২১ সালে মহাকাশ স্টেশনে যান ফাঙ্ক। এত বছর বয়সে কোনো পুরুষও মহাকাশে যাননি এখনো।
এই নারীরা মহাকাশযাত্রায় বিভিন্ন দিকে প্রথম। এর বাইরেও প্রচুর নারী মহাকাশচারী, গবেষক, চিন্তক কিংবা বিজ্ঞানী আছেন পৃথিবীতে। মহাকাশের মহা রহস্যভেদে তাঁদের অবদানও পৃথিবী স্বীকার করে নিয়েছে।