হোম > নারী

পারুলের বাঁশিতে নিশ্চিন্ত সবাই

আনিসুল হক জুয়েল, দিনাজপুর

মুখে বাঁশি, হাতে টর্চ লাইট। বাঁশিতে ফুঁ দিতে দিতে টর্চ লাইট নিয়ে পরীক্ষা করছেন বাজারের বন্ধ থাকা দোকানগুলোর শাটারের একটার পর একটা তালা। হাত দিয়ে টেনে দেখছেন কোনো তালা খোলা আছে কি না, কেউ তালা লাগাতে ভুলে গেছেন কি না।

স্বাভাবিকভাবে দেখলে মনে হবে, এটি একজন নৈশপ্রহরীর নৈমিত্তিক ঘটনা। কিন্তু একটু ভালো করে এই নৈশপ্রহরীর মুখের দিকে তাকালে চমকে উঠবেন যে কেউ। ভূত দেখার মতোই চমকে উঠে নিশ্চিত হতে দ্বিতীয়বার তাকাবেন তাঁর মুখপানে। তবে তাতেও বিভোর কাটবে না নিশ্চিত। পরে হয়তো মনে হবে, মানসিক রোগী নাকি! কেননা নৈশপ্রহরী আমাদের সমাজে বহুল পরিচিত হলেও এ কাজে নারীর অংশগ্রহণ অকল্পনীয় বিষয়।

নানান প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে কর্মক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে চললেও কিছু কিছু পেশায় আজও তাদের তেমন দেখা যায় না। আজ তেমনই একজন স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা অসমসাহসী নারীর কথা শুনব।

নারী হয়েও অন্যদের শান্তির ঘুম উপহার দিতে নৈশপ্রহরী হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার মনমথপুর ইউনিয়নের পূর্ব রাজাবাসর এলাকার মৃত আব্দুল লতিফের মেয়ে পারুল বেগম। অভাব মোচনে দারিদ্র্যের সঙ্গে পেরে না উঠে শেষ পর্যন্ত অসমসাহসী এই নারী যেন সমাজের চোখে আমাদের অসহায়ত্বকেই ব্যঙ্গ করেন। 

যৌবনে আব্দুল কাইয়ুম নামে একজনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেও খুব বেশি দিন সংসার করা হয়ে ওঠেনি পারুল বেগমের। মাত্র এক মাসের মাথায় ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। কিন্তু মা-বাবার মৃত্যুর পর অসহায় হয়ে পড়েন পারুল।

জীবিকার তাগিদে স্থানীয় মিশন বাজারে পানের দোকান দিলেও অর্থাভাবে সেটিও ধরে রাখতে পারেননি। পরে সেই বাজারে স্থানীয় দোকানিদের সহযোগিতায় শুরু করেন নৈশপ্রহরীর কাজ। যেখানে একজন নারী রাতের আঁধারে একাকী পথ চলতেও ভয় পান, সেখানে পারুল বেগম জীবিকার তাগিদে একাই টানা ১০ বছর ধরে করে চলেছেন এই কাজ। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বেশ সফলতার সঙ্গে করছেন তিনি।

দোকানমালিকেরা জানান, অতি বিশ্বস্ত পারুল বেগম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত এই বাজারে চুরির ঘটনা ঘটেনি।
বিবাহবিচ্ছেদের পর জীবিকার তাগিদে রাজধানী ঢাকায় পাড়ি জমান পারুল বেগম। কিন্তু টিকতে না পেরে শেষ পর্যন্ত নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। বর্তমানে ছামিউল হক নামের একমাত্র ভাগনে ছাড়া তাঁর আপন বলতে কেউ নেই। বোনের মৃত্যুর পর নিজ সন্তানের মতো লালন করছেন তাকে।

উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া একখণ্ড জমিতে মাটি দিয়ে গড়ে তোলা ঝুপড়িতে ভাগনেসহ বসবাস করেন তিনি। নৈশপ্রহরীর কাজ করে মাসে হাজার চারেক টাকা আয় করেন পারুল। অভাবের সংসারে তা দিয়ে কোনোরকমে দিন চলে তাঁর। পারুল বেগমের একটি নিশ্চিত জীবনের জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

নারীবান্ধব হচ্ছি কবে

সর্বস্ব হারানো এক নারীর গল্প

নারীদের তালাক দেওয়ার অধিকার আছে

আমি একজন অফিসারের স্ত্রী

সফল সাংবাদিক আইরিন

নতুন বছরে নতুন আশা

সম্মান আমার নয়, আমার কাজের

দাসত্বের বিরুদ্ধে লড়ে চলেছেন ইউজেনিয়া বোনেত্তি

পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন কাটাতে পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে

পাশ্চাত্যের যে নারী প্রথম গণিত বিষয়ে বই লেখেন

সেকশন