Ajker Patrika
হোম > বিশ্লেষণ

টিকটককে ডরায় কারা? 

অনলাইন ডেস্ক

টিকটককে ডরায় কারা? 

টিকটকের মাতৃপ্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের প্রধান কার্যালয় চীনে। আর চীনা প্রতিষ্ঠান মানেই সরকারি নিয়ন্ত্রণবলয়ের অধীন। দেশটি তার নাগরিকদের ওপর নজরদারিতে সিদ্ধহস্ত। বিশ্লেষকদের ধারণা, চীন সরকার এই অ্যাপ ব্যবহার করে নজরদারি নিজ ভূখণ্ডের বাইরে বিস্তৃত করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে টিকটক ‘ট্রোজান হর্স’ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। এ নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসেও বিতর্ক শুরু হয়েছে।

টিকটক নিয়ে বিশ্বজুড়ে যে আলোচনা, তা যেমন যৌক্তিক তেমনি উদ্বেগজনকও। টিকটক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর প্রতিযোগিতা কঠিন করে তোলার পাশাপাশি চীনে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির বিরোধীদের জন্যও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে। ফলে পশ্চিমের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হতে থাকায় পশ্চিমা বিশ্বের ইন্টারনেট পরিসরে নিরাপদে টিকটক ব্যবহার এবং এর ব্যবসা পরিচালনার পরিস্থিতি যাচাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

 টিকটকের নিরীহ দর্শন ইন্টারফেসের নিচে লুকিয়ে রয়েছে এক শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। ধারণা করা হয়, এই সক্ষমতার কারণেই টিকটক ফেসবুকেরও অর্ধেক সময়ে ১০০ কোটি ব্যবহারকারী আকর্ষণ করতে পেরেছে। আমেরিকায় টিকটক ব্যবহারকারী ইনস্টাগ্রামের চেয়ে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বেশি সময় দেন এই প্ল্যাটফর্মে। চলতি বছরই টিকটকের বাৎসরিক আয় ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে পর্যবেক্ষকদের অনুমান। ২০২৪ সালেই তা হবে ২৩ বিলিয়ন ডলার, যা ইউটিউবের বর্তমান বাৎসরিক আয়ের সমান। 

পশ্চিমা অনলাইন প্ল্যাটফর্কগুলোর বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে চীনা টিকটকপশ্চিমা বিশ্ব টিকটকের ব্যবসা নিয়ে অস্বস্তিতে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর শাসনামলে টিকটক মার্কিন ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ফলে টিকটকের আয় যেখানে দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে এবং চীনের সঙ্গে পশ্চিমাদের সম্পর্ক ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে, সেখানে টিকটক নিয়ে বেইজিং-পশ্চিম নতুন করে দ্বন্দ্বেও জড়িয়ে পড়তে পারে। 

টিকটকের যে বিষয়টি বেশি আলোচিত, তা হলো ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা। চীনের রাষ্ট্রীয় নীতি অনুসারে বেইজিং চাইলেই চীনভিত্তিক যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য দাবি করতে পারে। টিকটকে সাধারণত ব্যবহারকারীরা বিনোদনমূলক কনটেন্ট তৈরি করেন। তাঁদের মনে হতে পারে, কেউ তাদের নাচের মুদ্রা বিশ্লেষণ করলে কী আর আসে যায়! কিন্তু এই আপাত নিরাপত্তাবোধ ভবিষ্যতে বড় সমস্যা হিসেবে হাজির হতে পারে। 

টিকটক নিয়ে আরেকটি সমস্যা হলো, বিনোদনের উৎসের পাশাপাশি এটি সংবাদেরও উৎসে পরিণত হচ্ছে। এক-চতুর্থাংশ মার্কিন নাগরিক মনে করেন, টিকটক একটি ভালো সংবাদ উৎস। চীনা কর্তৃপক্ষ চাইলেই টিকটক ব্যবহারকারীদের কনটেন্টের পছন্দ নির্ধারণ করে দিতে পারবে। ফলে বিদেশি ব্যবহারকারীদের পছন্দের ওপর চীনা কর্তৃপক্ষের চাহিদাই প্রাধান্য পাবে। তাই চীন যে নিজ স্বার্থে টিকটক ব্যবহার করবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। 

টিকটকের চীনা মালিকানাও একটি গুরুতর ইস্যু। চার বছর আগে বাইটড্যান্সেরই আরেকটি অ্যাপ বন্ধ করে দিয়েছিল বেইজিং। যদিও টিকটকের কনটেন্ট মডারেটররা চীনের বাইরে অবস্থান করছেন, তবে এর অ্যালগরিদম বেইজিংয়েই সংরক্ষিত। এই অ্যালগরিদমই নির্ধারণ করে কোন কনটেন্ট ভাইরাল হবে। চীন সরকার টিকটকের অ্যালগরিদম নিয়ন্ত্রণ করবে না বা সরকারের মতাদর্শের নয় এমন কনটেন্ট ফিল্টারিং করবে না সেই নিশ্চয়তা কে দেবে?

টিকটক অনেক আগে থেকেই বলে আসছে, এমন কোনো ঘটনা এখনো ঘটেনি এবং ঘটবেও না। তবে চীন সরকারের অতীত রেকর্ড বলে, তারা যেকোনো সময় টিকটকের ওপর গোপনে বা প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপ করতে পারে। তাই নতুন নিরাপত্তা পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া ছাড়া পশ্চিমা বিশ্বে টিকটক চালানো বিপজ্জনক হয়ে উঠবে এবং প্রয়োজনে তা বন্ধও করে দিতে হতে পারে। 

টিকটকের বন্ধ হয়ে যাওয়া ঠেকাতে এর কারিগরি বিষয়গুলো সংস্কার করতে হবে। টিকটক এরই মধ্যে মার্কিন নীতিকাঠামোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে কাজ করছে। এই লক্ষ্যে টিকটক মার্কিন ব্যবহারকারীদের তথ্য সংরক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছে আমেরিকান সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান ওরাকলকে। যেখানে চীনে থাকা টিকটক কর্তৃপক্ষকে খুব অল্প প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে। ‘টিকটকের অ্যালগরিদম ম্যানিপুলেট করা হয়’—এমন প্রশ্ন মোকাবিলায় প্রতিষ্ঠানটি তৃতীয় পক্ষকে তাদের অ্যালগরিদম দেখার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এটি যথেষ্ট নয়। কারণ, যেকোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রোগ্রামের ‘ব্ল্যাক বক্স’ বুঝতে পারা কঠিন। এক্ষেত্রে টিকটকের সোর্স কোড উন্মুক্ত করা এবং অ্যালগরিদম কীভাবে হালনাগাদ করা হয় তা দেখার অনুমতি দেওয়া হলে হয়তো নিরাপত্তার বিষয়টি কিছুটা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে। 

টিকটককে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার ভাবনা বাস্তবায়নই কঠিন হবে। কারণ এর জন্য টিকটকের ব্যবস্থাপনাকে মূল প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স থেকে আলাদা করার প্রচেষ্টা আরও এগিয়ে যেতে হবে। চীনের বাইরে কার্যক্রম চালানোর জন্য একটি স্বাধীন পরিচালনা পর্ষদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে। চীন হয়তো এসব প্রক্রিয়ায় বাধা দেবে। এই বাধা টিকটকের এগিয়ে যাওয়ার জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। এমনকি তল্পিতল্পা গুটিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে চিরতরে বিদায়ও নিতে হতে পারে।

ট্রাম্পের অরাজক শাসনে অস্থির যুক্তরাষ্ট্র, টালমাটাল বিশ্ব

ভারতের আকাশে রুশ-মার্কিন দ্বৈরথ

মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিত করায় ইউক্রেনের পরিণতি কী হতে পারে

যুক্তরাষ্ট্রের সরে দাঁড়ানোর শঙ্কা, আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকে চীনের আধিপত্য বাড়ছে কি

আমেরিকা ছাড়া শুধু ইউরোপ কি পারবে ইউক্রেনকে রক্ষা করতে

প্রতিরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র-নির্ভরতা কমাতে কতটা সক্ষম ইউরোপ

ট্রাম্প-জেলেনস্কি দ্বন্দ্বে যুদ্ধ জয়ের চেয়েও বড় বিজয় পুতিনের

সেকেন্ড রিপাবলিক: সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার নজির বেশি

একযোগে দুই পরাশক্তির চাপে ইউক্রেন

আইএমএফ ও শ্রীলঙ্কার স্বার্থের মধ্যে যেভাবে ভারসাম্য রেখে চলেছেন দিসানায়েকে