Ajker Patrika
হোম > বিশ্লেষণ

ডলার ছাপিয়ে আবারও বৈশ্বিক মুদ্রা হয়ে উঠছে সোনা

অনলাইন ডেস্ক

ডলার ছাপিয়ে আবারও বৈশ্বিক মুদ্রা হয়ে উঠছে সোনা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই বিশ্বজুড়ে ডলারের গুরুত্ব বাড়তে থাকে। সে সময় থেকে মিত্র দেশগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির ক্ষেত্রে অর্থের বিপরীতে সোনা দিতে থাকে এবং এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র একপর্যায়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোনা মজুতকারী দেশে পরিণত হয়। বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর অনেক দেশই মার্কিন মুদ্রা ডলারের সঙ্গে নিজেদের মুদ্রাকে যুক্ত করতে থাকে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে লেনদেনের মানদণ্ড হিসেবে সোনার অবস্থান ধসে পড়ে এবং ডলারের আধিপত্য কায়েম হয়। 

দেশগুলো ডলারকে নিজেদের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করে। ১৯৯৯ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট বৈদেশিক রিজার্ভের ৭১ শতাংশই ছিল ডলারে। এরপর থেকে অবশ্য ডলারের আধিপত্য কিছুটা কমতে থাকে, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোটভুক্ত দেশগুলোর জন্য অভিন্ন মুদ্রা ইউরো চালুর পর থেকে। 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব অনুসারে, ২০১০ সালে বিশ্বের মোট রিজার্ভের ৬২ শতাংশ ছিল ডলারে, ২০২০ সালে ৫৯ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে ছিল ৫৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। যদিও বিশ্ববাণিজ্যে ডলারের গুরুত্ব কমছে, তার পরও মার্কিন এই মুদ্রা বৈশ্বিক রিজার্ভের সবচেয়ে বড় অংশ ধরে রেখেছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইউরোতে মাত্র বিশ্বের ২০ শতাংশ রিজার্ভ আছে। 

ডি-ডলারাইজেশেনর লক্ষণসমূহ 
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রিজার্ভ ডলারে হলেও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ডলারের ওপর থেকে আস্থা কমছে। মূলত ডলার শক্তিশালী হয়ে যাওয়ার কারণে এমনটা ঘটছে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের কথাই ধরা যাক। দেশটির সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে রুপির ব্যবহার বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট জি-২০-এর একটি চুক্তিও হয়েছে। 

এ ছাড়া, বিশ্ব রাজনীতির টালমাটাল অবস্থা, রাশিয়া-চীনের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্যে জড়িয়ে থাকা দেশগুলোও লেনদেনের ক্ষেত্রে বিকল্প খুঁজছে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে থাকা রাশিয়ার রিজার্ভ বাজেয়াপ্ত করায় এই অবস্থায় অন্যান্য দেশও ভাবছে, তারাও রাশিয়ার মতো ঝামেলায় পড়তে পারে যেকোনো সময়। এ কারণে এসব দেশ দ্বিমুখী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রথমত, এসব দেশ স্থানীয় বা নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেনের পরিমাণ বাড়াচ্ছে এবং দ্বিতীয়ত সোনার মজুত বাড়াচ্ছে। 
 
যেমন ভারতের কথাই ধরা যাক। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৬৪৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে ৫৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের সমান পরিমাণে দেশটির সোনার মজুত বেড়েছে। এ সময় মাত্র ১ সপ্তাহের মধ্যে ভারত ১২৪ কোটি ডলারের সোনা কিনেছে। সব মিলিয়ে ভারতের সোনার মজুত গত বছরের তুলনায় ১৩ টন বেড়েছে। বর্তমানে দেশটি সোনার মজুতের দিক থেকে বিশ্বে নবম। 

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মিলে ৪৫০ দশমিক ১ টন সোনা কিনেছিল। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৩৫ দশমিক ৭ টনে এবং ২০২৩ সালে দেশগুলোর সোনা কেনার পরিমাণ ছিল ১০৩৭ টন। সব মিলিয়ে বিগত বছরগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা ক্রয়ের নজিরবিহীন আকাঙ্ক্ষা বিশ্বে সোনার চাহিদা বাড়িয়েছে। 

এর ধারাবাহিকতায় গত দুই-তিন বছরে সোনার দাম নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে। ২০১৮ সালে প্রতি আউন্স সোনার গড় দাম যেখানে ছিল ১২৬৮ দশমিক ৯৩ ডলার, ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১২৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র ছয় বছরেরও কম সময়ে সোনার দাম ৬৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে এবং প্রতিবছর সেই হিসাবে বেড়েছে প্রায় ৯ দশমিক ৭ শতাংশ করে। 

কেন সোনার চাহিদা বাড়ছে

বিগত কয়েক বছরে সোনার চাহিদা বাড়ার কারণে দামও বেড়েছে সমান তালে। ১৯৮৮ সালে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ৪৩৭ ডলার, ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২৬৮ দশমিক ৯৩ ডলারে অর্থাৎ এই সময়ে প্রতিবছর গড়ে সোনার দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ হারে। কিন্তু বিগত ৬ বছরে তা বেড়েছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ করে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বৈশ্বিক মুদ্রা ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সোনার চাহিদা বৃদ্ধির প্রথম কারণ হলো—যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার কমানোর সম্ভাবনা ব্যক্ত করেছে। এমন পরিস্থিতিতে যখন সুদের হার কম, তখন মানুষ নগত আর্থিক সম্পদ রাখার পরিবর্তে সোনা কেনার দিকে আকৃষ্ট হবে। দ্বিতীয়ত, চীনসহ সারা বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এখন বেশি করে সোনা কিনছে। এই প্রবণতা কমার কোনো লক্ষণ নেই। 

তৃতীয়ত, বিশ্বজুড়ে সোনার দাম বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যদি তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সোনার পরিমাণ বাড়ায়, তাহলে স্বর্ণের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের মান স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে। 

সোনার এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা অনেক প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হাজির করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ডলারের আধিপত্য শেষ হচ্ছে কি না—এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই বলে দেবে। তবে এটা স্পষ্ট যে, অবশ্যই ডি-ডলারাইজেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ উদীয়মান অর্থনীতিগুলো তাদের নিজস্ব মুদ্রায় তাদের বৈদেশিক বাণিজ্য নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করছে।  

মানি কন্ট্রোল থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

যুক্তরাষ্ট্রের সরে দাঁড়ানোর শঙ্কা, আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকে চীনের আধিপত্য বাড়ছে কি

আমেরিকা ছাড়া শুধু ইউরোপ কি পারবে ইউক্রেনকে রক্ষা করতে

প্রতিরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র-নির্ভরতা কমাতে কতটা সক্ষম ইউরোপ

ট্রাম্প-জেলেনস্কি দ্বন্দ্বে যুদ্ধ জয়ের চেয়েও বড় বিজয় পুতিনের

সেকেন্ড রিপাবলিক: সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার নজির বেশি

একযোগে দুই পরাশক্তির চাপে ইউক্রেন

আইএমএফ ও শ্রীলঙ্কার স্বার্থের মধ্যে যেভাবে ভারসাম্য রেখে চলেছেন দিসানায়েকে

ভারতে ইলন মাস্কের টেসলা, উদ্বিগ্ন দেশীয় গাড়ি নির্মাতারা

আঞ্চলিক সহযোগিতায় অনাগ্রহ, উপসাগরীয় দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছে দক্ষিণ এশিয়া

চীন সফরে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল, ঢাকাকে কাছে টানার চেষ্টায় বেইজিং