প্রকৃতির মায়ায় সাজানো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম রাজ্য কলোরাডো, যেখানে বছরের সব সময় প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণপিপাসুদের পদভারে পাহাড়ের চারদিক সরগরম থাকে। মাউন্ট ইভান, সামিট অব পাইক পিকস, গ্র্যান্ড মেসা, গার্ডন অব দ্য গর্ড, সাফায়ার পয়েন্ট, ফোর কণার মনুমেন্ট, ডেনভার, ডিলন শহর, কলোরাডো স্প্রিং, ফিসকো শহর—সব মিলে এক অদ্ভুত ভালো লাগা পাহাড়ের দেশ কলোরাডো।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস রাজ্য থেকে আমরা কজন টানা ৯ ঘণ্টা সড়কপথে সমতল থেকে পাহাড়ের দেশ কলোরাডোর ডিলন শহরে গিয়ে পৌঁছে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যায় বুকিং করা বাড়িতে উঠলাম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯ হাজার ফুট ওপরে এই শহরে রাত জাগার অন্য রকম অনুভূতি। রাত যত গভীর হতে লাগল, নির্জনতা আরও স্পষ্ট হতে থাকল। আলোঝলমলে পাহাড়ের মাঝখানে এ যেন একখণ্ড হীরক শহর। রকি মাউনটেন থেকে নেমে আসা শত শত ঝরনার কলতানে চোখের ঘুম টেনে নিয়ে যায় ভোরের আলো। মাইলের পর মাইল সারি সারি সবুজ পাইনগাছ পাহাড় আর সমতলের মাঝখানে প্রকৃতির রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘদিন।
পুরো কলোরাডো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক ওপরে। এখানকার জিওলজিক্যাল জরিপ থেকে জানা যায়, শতবর্ষী রাজ্য হিসেবে কলোরাডোকে সেনটেনিয়াল স্টেট বলা হয়। আমেরিকা স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিতে ১৮৭৬ সালে এটি রাজ্য হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ৪১৭টি সিটি নিয়ে পাহাড়ঘেরা কলোরাডো। ১৪ হাজার ফুটের ওপরে ৫৮টি পর্বতশৃঙ্গ রয়েছে আমেরিকার এই রাজ্যে। যদিও এই হিসাব নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে ফেসবুক-টুইটারে।
কলোরাডোর রাজধানী ডেনভার। যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত ব্যয়বহুল শহরের মধ্যে এটি একটি। ছোট ছোট জলাধার, আঁকাবাঁকা রাস্তা, রকি মাউন্টেন থেকে ধেয়ে আসা শত শত ঝরনা ও সবুজ প্রকৃতি যেন মায়ের কোলে আগলে রেখেছে ডেনভার শহরকে।
কলোরাডো রাজ্যে বছরের প্রতিটি ঋতুতে পর্যটকদের জন্য অনন্যসাধারণ জিনিস খুঁজে পাওয়া যাবে, যা রকি পর্বতমালার চেয়েও বেশি। এর মধ্যে রয়েছে বাইকিং, হাইকিং, এটিভি রেন্টাল ট্যুর, বোটিং, খাদ্য উৎসব, ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা, কলোরাডো গুহা, কলোরাডো ক্রস কান্ট্রি স্কিইংসহ আরও কত কী! অবাক করা কাণ্ড হলো, এখানে আছে ‘ফোর কর্নার মনুমেন্ট’ বলে খ্যাত পুরো আমেরিকার একমাত্র জায়গা, যেখানে অ্যারিজোনা, নিউ মেক্সিকো, উটাহ ও কলোরাডো—এই চার রাজ্যের কোণগুলো এক পথে মিশেছে।
উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড় পাকা রাস্তায় গড়া ১৪ হাজার ফুট উচ্চতায় ‘মাউন্ট ইভান’ পর্বতশৃঙ্গে ড্রাইভ করার অপার সুযোগ রয়েছে। এই পাহাড়ের ১১ হাজার ফুট ওপরে উঠতে একঝাঁক পাহাড়ি ছাগল আমাদের গতি রোধ করে গাড়ির আশপাশে কী যেন খুঁজতে লাগল—অনেকটা গাড়ি তল্লাশির মতো করে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অনেক দর্শনার্থী মাঝেমধ্যে এসব প্রাণীকে খাবার দেয়। তাই তারা এভাবে গাড়ির গতি রোধ করে থাকে। খাওয়া না পেলে ব্যারিকেড তুলে পাহাড়ে চলে যায়।
গাড়ির গতিবেগ কখনো ২০, কখনো তারও নিচে ১৫ কিলোমিটার। দীর্ঘ ২৮ মাইল আঁকাবাঁকা সরু পর্বতশৃঙ্গের ড্রাইভ ওয়ে পাড়ি দেওয়ার প্রথম অভিজ্ঞতা। ধীরগতিতে এগিয়ে যাওয়া গাড়ির আয়নায় মেঘের ওড়াউড়ির ফাঁকে চোখে পড়ে স্বচ্ছ জলের ঢেউ, যেন প্রকৃতির অপার সৃষ্টি ‘প্রাকৃতিক জলাধার’ সামিট লেক।
পৃথিবীর বৃহত্তম সমতল পর্বত ‘গ্র্যান্ড মেসা’। স্বতন্ত্র ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২ হাজার ফুট উঁচুতে দাঁড়িয়ে গ্র্যান্ড মেসায় রয়েছে ৬০ প্রজাতির মেমলস ও ৩০০ প্রজাতির পাখি।
চিজ বার্গারের দেশ কলোরাডোকে জানতে https://climate.colostate.edu/ ব্রাউজ করুন।