টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম শহরের নিম্নাঞ্চলের সড়ক আর ঘরবাড়িতে এখন থৈ থৈ করছে পানি। এতদিন কিছু সড়কে পানি উঠলেও আজ শুক্রবার সন্ধ্যার পর বেশিরভাগ সড়ক ভেসে গেছে। বিশেষ করে নগরীর জিইসির বাটা গলির মোড় থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত সড়কজুড়ে এখন শুধুই পানি।
পানির কারণে সড়কের এই তিন কিলোমিটারজুড়ে শতাধিক যানবাহনের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হয়ে গেছে। ফলে সড়কজুড়ে মারাত্মক যানজট তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আখতারুজ্জামান এবং বহদ্দারহাট উড়ালসড়কেও। দুটি উড়ালসড়কের প্রবেশমুখে পানি আর বিকল গাড়ির কারণে উড়ালসড়কের ওপরেও প্রচুর গাড়ি আটকা পড়েছে।
রক্ষা পায়নি বহদ্দারহাটে অবস্থিত সিটি মেয়র এম রেজাউল করিমের বাড়িটিও। বাড়ির প্রবেশমুখ থেকে সড়ক ধরে পানি ঢুকে গেছে মেয়রের উঠানেও।
আজ রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত এই প্রতিবেদক জিইসি থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত সড়ক সরেজমিনে ঘুরে এ দৃশ্য দেখেন।
সড়ক দেখে স্রোতস্বিনী বলে ভুল হতে পারে! হাঁটু পানিতে যানজটের কারণে রাস্তা দিয়ে হাঁটার অবস্থাও নেই। উন্মুক্ত নালায় পড়ার ভয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটারও জো নেই। অফিস-কাজ শেষে ফিরতি মানুষের অনেকে তাই গন্তব্যে ফিরছিলেন আইল্যান্ড আর উড়ালসড়কের নিচের খোলা জায়গা ধরে। আবার যেখানে আইল্যান্ড ধরে হাঁটা যাচ্ছে না সেখানে ভোগান্তির শিকার হতে হয় মানুষজনকে। নাসিরবাদের সিঅ্যান্ডবি কলোনি, দু নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানের পাশ, মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট মোড়ে পানি দ্রুতগতিতে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা মাথায় নিয়ে মানুষজনকে রাস্তা পারাপার করতে দেখা যায়। তিন কিলোমিটার সড়কের পুরোটাজুড়ে কোথাও সিএনজিচালিত অটোরিকশা, কোথাও প্রাইভেট কার, কোথাও টেম্পু-ট্রাক বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
মুরাদপুর মোড়ে বিকল হয়ে পড়ে ছিল একটি প্রাইভেটকার। ভেতরে আটকা পড়েন যাত্রীরা। প্রাইভেটকার চালক রহিম উল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যাত্রীরা চকবাজার থেকে বায়েজিদ এলাকায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু মুরাদপুর মোড়ে পানি ঢুকে যাওয়ায় ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এখন যানজটের কারণে সামনেও যেতে পারছি না, পেছনেও যেতে পারছি না।’
পানির কারণে গাড়ির সংকট দেখা দেওয়ায় হেঁটে শুলকবহরের বাসায় ফিরছিলেন এসএম জিয়া চৌধুরী নামে এক তরুণ। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছুটির দিন থাকায় জিইসি এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফেরার সময় কোনো গাড়ি না পেয়ে হাঁটছিলাম। একটু সামনে এগোতেই দেখি সড়কে হাঁটুর ওপর পানি। কোনোমতে দু নম্বর গেট এসে একটি মিনিবাসে উঠি। কিন্তু মুরাদপুর পার হতে সেটিও বিকল। বাধ্য হয়ে তাই হেঁটে বাসায় ফিরছি।’
বহদ্দারহাটে অবস্থিত মেয়রের বাড়ির সামনেও পানি উঠে গেছে। তাঁর বাড়ির সামনে ধরে যাচ্ছিলেন এক তরুণ। জানতে চাইলে তিনি নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘গত বছর বৃষ্টিতে মেয়রের বাড়ির উঠানে হাঁটুর ওপর সমান পানি উঠে গিয়েছিল। এরপর মেয়রের বাড়ির সামনের সড়ক উঁচু করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও পানি থেকে রক্ষা মিলল না।’