ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা আতিকুর রহমান (৩৮) নামে সেই যুবককে অবশেষে পাওয়া গেছে। আজ মঙ্গলবার তাঁকে খুঁজে পাওয়ার পরপরই তাঁর বাড়িতে লাল নিশান টাঙিয়ে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। পাশাপাশি লাল রঙের হোম কোয়ারেন্টিন লেখাযুক্ত স্টিকার ঝুলিয়ে দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
আজ বিকেল সাড়ে ৫টায় নিশানটি টানানো হয়। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকাফেরত আরও সাত প্রবাসীর বাড়িতে লাল পতাকা টানানো হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বাঞ্ছারামপুর সদরের খোষকান্দি গ্রামের মো. ফজলু মিয়ার ছেলে আতিকুর রহমান। দক্ষিণ আফ্রিকাপ্রবাসী আতিকুর ১৬ নভেম্বর দেশে আসেন। আবদুর রহিম চেয়ারম্যানের নির্বাচনে প্রচারণায় অংশ নিতে ১৯ দিনের ছুটিতে দেশে আসেন তিনি। আগামী ৭ ডিসেম্বর তাঁর ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবদুর রহিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সে আমার (আতিকুর) শ্যালক। ২৮ নভেম্বর আমার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশে আসে। আগামী ৭ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যাবে। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশ তাকে ১৪ দিনের কঠোর হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে।’
ইউএনও সৈয়দা শামসাদ বেগম নিজে বাড়িতে গিয়ে লাল নিশান টাঙিয়ে দেন।
এদিকে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকাফেরত আরও ছয় প্রবাসীর বাড়িতে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে।
জানা গেছে, চলতি সপ্তাহের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরেছেন কসবার পাঁচজন এবং বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগরের একজন করে।
আজ দুপুরে কসবা, নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরত সাত প্রবাসীর বাড়িতে গিয়ে লাল পতাকা টাঙিয়ে তাঁদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ-উল-আলম সরজমিনে দক্ষিণ আফ্রিকাফেরত প্রবাসীদের বাড়িতে যান। তাঁদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের বাড়িতে গিয়ে হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাসহ নমুনা সংগ্রহ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান ইউএনও।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. একরাম উল্লাহ জানান, গতকাল সোমবার আফ্রিকা থেকে আগতদের তালিকা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে এসেছে। তালিকায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাতজন প্রবাসী রয়েছেন, যাঁরা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসেছেন। তাঁদের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আগতদের কোনো উপসর্গ থাকলে নমুনা সংগ্রহ করা হবে। করোনার অস্তিত্ব ধরা পড়লে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া আখাউড়া স্থলবন্দরে বিভিন্ন সতর্কতা নেওয়া হবে।
এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে জরুরি বৈঠক করে জেলা করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কমিটি। এ বৈঠকেই ওই সাত প্রবাসীর বাড়ির সামনে কোভিড-১৯ লেখা নিশান টাঙানোসহ কঠোর হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতের সিদ্ধান্ত হয়। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন প্রথম শনাক্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। এরপর বেশ কয়েকটি দেশে এই ধরন শনাক্ত হয়েছে। এই ধরনের সংক্রমণ বিস্তারের সক্ষমতা অনেক বেশি বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।