প্রথমবারের মতো সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হচ্ছে সীতাকুণ্ডের টমেটো। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে টমেটো রপ্তানিতে ভালো দাম পেয়ে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হলে দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে এমনটাই আশা কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবীবুল্লাহ মালয়েশিয়ায় টমেটো রপ্তানি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ ও স্থানীয়রা জানান, ‘সবজি ভান্ডার’ হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে বিভিন্ন সবজি এর আগেও বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। তবে এর মধ্যে ছিল না টমেটো। এ বছরই সমুদ্রপথে প্রথমবারের মতো রপ্তানি শুরু হয়েছে টমেটোর। কুমিল্লার একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান উপজেলার বারৈয়াঢালা, পৌর সদর ও মুরাদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান ঘুরে টমেটো সংগ্রহ করে তা বিদেশে পাঠাচ্ছেন। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও কৃষকদের সঙ্গে সমন্বয় করে এই রপ্তানি প্রক্রিয়া সরাসরি তদারকি করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
টমেটো রপ্তানির প্রক্রিয়া দেখতে পৌরসভার নুনাছড়া এলাকায় গেলে সেখানে উপস্থিত কৃষক মো. তাহের বলেন, ‘১২০ শতক জমিতে বাহুবলি জাতের টমেটো চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। টমেটো বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছি। এর মধ্যেই কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে সাত্তার এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটি বিদেশে রপ্তানির জন্য টমেটো কিনতে এলে আমরা সানন্দে তাদের কাছে টমেটো বিক্রি করেছি।’
তাহের ও নুর মোহাম্মদ ছাড়াও তাজুল ইসলাম, আবুল কাসেম, মো. হোসেন, মুরাদপুর গ্রামের মো. এখলাস উদ্দিন জানান, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটি তাদের সবার কাছ থেকে বাহুবলী প্রজাতির টমেটো কিনেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সাত্তার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘আমি ও আমার বড় ভাই মোস্তফা গত পাঁচ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে টমেটো, আলুসহ বিভিন্ন সবজি সংগ্রহ করে মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করছি। তবে এবারই আমরা টমেটো সংগ্রহ করেছি সীতাকুণ্ড পৌরসভা, বারৈয়াঢালা ও মুরাদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান থেকে। এখান থেকে ১৩ টন টমেটো রপ্তানি করছি আমরা।’
সীতাকুণ্ড উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহআলম বলেন, ‘আমরা নিজেরাও খেত থেকে কৃষক ও রপ্তানিকারকদের সহযোগিতা করেছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবীবুল্লাহ জানান, সীতাকুণ্ডে প্রচুর শাক-সবজি উৎপাদন হয়। এসবের মধ্যে শিম ও শিমের বিচি বিদেশে রপ্তানি হয়ে আসছে। তবে এবারই প্রথম টমেটো রপ্তানি শুরু হয়েছে। সীতাকুণ্ডে এবার ১ হাজার ৯০০ কৃষক ৩৮০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। ৭ হাজার মেট্রিকটন টমেটো উৎপাদন হয়েছে। এর আনুমানিক মূল্য ১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাহুবলী প্রজাতির ১৩ টন টমেটো চলে যাচ্ছে মালয়েশিয়ায়।
এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, সাত্তার এন্টারপ্রাইজ নামে কুমিল্লার একটি প্রতিষ্ঠান মুরাদপুর ও বারৈয়াঢালার অন্তত ১০ জন কৃষকের কাছ থেকে এসব টমেটো সংগ্রহ করে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠিয়েছে। এখন থেকে নিয়মিত রপ্তানি হবে এই টমেটো। এভাবে নিয়মিত রপ্তানি হলে কৃষক ও দেশ উভয়ে উপকৃত হবে।