কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শেখ হাসিনা হলের নামফলক, পোড়ামাটির ফলকসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) অঙ্গসংগঠন ছাত্রদলের বিরুদ্ধে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ ব্যাপারটি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন।
আজ শুক্রবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টায় এই ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।
এর আগে হলটির আবাসিক শিক্ষার্থীরা গত ৩ আগস্ট প্রতিবাদস্বরূপ শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করে ‘সুনীতি-শান্তি হল’ নামকরণ করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকে থাকা শেখ হাসিনার নামফলকটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। মূল ফটকের দুই পাশে থাকা পোড়ামাটির ফলকে থাকা শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার মুখচ্ছবিটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া উদ্বোধনী স্মারকটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ‘সন্ধ্যায় কয়েকজন লোক হলের গেটে আসে। তারা’ কে বলেরে জিয়া নাই, জিয়া সারা বাংলায়’, ‘আমরা সবাই জিয়ার সেনা, ভয় করি না বুলেট বোমা’, ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও সালাম’, ‘জয় জিয়া, জয় তারেক’ ইত্যাদি বলে স্লোগান দিতে থাকেন। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা হলের নামফলকটি দেখে তাঁরা সেটি ভাঙতে যায়। পরে এটি ভেঙে তাঁরা ভেতরে থাকা হাসিনা ম্যুরাল ভাঙতে উদ্যত হয়। সে সময় গেট বন্ধ করে দিলে তাঁরা গেটের বাম পাশে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের পোড়ামাটির ফলকটি ভেঙে ফেলে।
এই বিষয়ে শেখ হাসিনা হলের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ফারিয়া আক্তার ভূঁইয়া বলেন, ‘বাইরে থেকে কেউ এসে আমাদের হলে হামলা করছে। এতে আমরা শিক্ষার্থীরা একপ্রকার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাদের হলে বর্তমানে কোনো প্রশাসনিক কেউ নেই, এই হামলার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
এই বিষয়ে শেখ হাসিনা হলের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী মুনিরা আক্তার বলেন, ‘হল যেহেতু শিক্ষার্থীদের, নেমপ্লেট ভাঙার মতো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে সেটা শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আসার কথা ছিল। এখানে তৃতীয় এক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর দেখা দিয়েছে, যারা নিজেদের দলের ক্ষমতা দেখানোর নিমিত্তে এই সব কাজ করছে। হলের মেয়েরা অনুপস্থিত থাকা অবস্থায় এরূপ কর্মকাণ্ড পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার রূপ নিতে পারে। তাই প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, এরূপ দল বা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অতি দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ দাবি করেছেন, ছাত্রদলের বা বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ এই ভাঙচুর করেনি, বরং ছাত্রলীগের দুষ্কৃতকারীরা এই কাজ করে ছাত্রদলের নাম খারাপ করতে চাচ্ছে।
এই বিষয় হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মেহের নিগার বলেন, ‘আমরা প্রশাসন ঘটনাটি নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা করেছি। শিক্ষার্থীদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা তাঁদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি, প্রয়োজনে রাতের মাঝেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করব।’
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর দেশ ছাড়লে স্থানীয় লোকজন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে থাকা বঙ্গবন্ধুর ছবি, নামফলক ও ভাস্কর্য ভাঙচুর করে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম মুছে যায়। সর্বশেষ তিন দিনের চেষ্টায় ৭ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হয়। তবে সর্বশেষ ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রদল জড়িত নয় বলে জানান সদস্যসচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ।