পাশেই রাস্তার কাজ চলছে, ধুলাবালুতে কাহিল অবস্থা। এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। এসবের মাঝেই পচা মাছের উৎকট গন্ধ। এই পচা মাছই পর্যটকদের ভেজেপুরে খাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে। তা খেয়ে প্রতিদিন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন পর্যটকেরা।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ঢুকতেই এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সবার নজর পড়ে। এই পয়েন্টটি এখন সব সময় পর্যটকে ভরপুর থাকে। এখানেই অনুমোদনবিহীন অর্ধশতাধিক ভ্রাম্যমাণ দোকানে ভাজা মাছ বিক্রি করা হয়।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কক্সবাজার জেলার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, সুগন্ধা পয়েন্টসহ সৈকতের কয়েকটি স্থানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভাজা মাছ ও কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে। এসব খেয়ে প্রতিনিয়ত পর্যটক ও স্থানীয় লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
অভিযোগ রয়েছে, বাজার থেকে কমমূল্যে পচা মাছ কিনে এনে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা ভ্যানে করে ভাজা মাছ ও কাঁকড়া পর্যটকদের কাছে বিক্রি করেন। এমনকি পর্যটকদের কাছ থেকে দামও রাখা হয় বেশি। ধুলাবালু, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও খোলামেলা জায়গায় এভাবে ভাজা মাছ বিক্রি হলেও তা যেন দেখার কেউ নেই।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভ্যানে করে হকাররা কাঁকড়া, চিংড়ি, লইট্যা, পোপা, মাইট্যা, লবস্টার, কালোচান্দা, টেকচান্দাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কিছু ভেজে মচমচে করে রাখা আর কিছু মসলা মেখে রাখা হয়েছে।
সাহাব উদ্দিন (২৫) নামের এক হকার বলেন, ভালো বেচা আছে। একেক মাছের একেক দাম। সে অনুযায়ী পর্যটকদের কাছে বিক্রি করা হয়। লাইসেন্স ছাড়া দোকান কীভাবে বসানো হয়—-এমন প্রশ্নে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে, কতিপয় সৈকতকর্মী দৈনিক ‘চুক্তির’ ভিত্তিতে এসব অবৈধ ভাজা মাছের দোকান বসায়।
ঢাকার উত্তরা থেকে সপরিবারে বেড়াতে এসেছেন শাহনাজ মুন্নীর পরিবার। তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, সুগন্ধা পয়েন্টই পর্যটকদের পছন্দের স্পট। অথচ এখানে গন্ধে হাঁটা যায় না। একে তো ধুলাবালু, তার ওপর ভাজা মাছের অসহ্য গন্ধ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এসব ব্যবসা বন্ধ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
কয়েকটি হোটেলের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, প্রায় সময় ভাজা মাছ খেয়ে পর্যটকেরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
কক্সবাজার মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আশরাফুল হক বলেন, সম্প্রতি আমার ভাই বেড়াতে এসেও ভাজা মাছ খেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) সৈয়দ মুরাদ ইসলাম এসব বন্ধে শিগগিরই বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে বলে জানান তিনি।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, সৈকতের ভাজা মাছের দোকানে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) সৈয়দ মুরাদ ইসলাম বলেন, এসব দোকানের কোনো লাইসেন্স নেই। প্রায় সময় উচ্ছেদ করলেও আবার বসানো হয়।