আগস্টের মাঝামাঝি থেকে বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে শরিয়তপুর জেলার ছয় উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ফসলের মাঠ। প্রায় এক মাস ধরে পদ্মার পানি রয়েছে বিপৎসীমার ওপরে। নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের কৃষিজমি দীর্ঘ সময় পানিতে ডুবে থাকায় বিপুল পরিমাণ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শরীয়তপুরে চলমান বন্যায় ৩ হাজার ৫৩৫ হেক্টর আবাদি জমির ফসল তলিয়ে গেছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি নেমে গেলে ফসলের খুব বেশি ক্ষতি হবে না বলে ধারণা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জাজির, গোসাইরহাট, নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা ও শরীয়তপুর সদর উপজেলার ৩ হাজার ৫৩৫ হেক্টর ফসলে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ২৯৭ হেক্টর জমির বোনা আমন আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া রোপা আমন ৯০১ হেক্টর, সবজি ২০৫ হেক্টর, আখ ৯১ হেক্টর ও ৪১ হেক্টর জমির পান পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়া ফসলের মধ্যে কী পরিমাণ এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা এখনই জানাতে পারেননি কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর মাঠ পর্যায়ের জরিপ শেষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হবে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
জাজিরার পাইনপাড়ার সুফিয়া বেগম বলেন, ঋণ করে শীতকালীন আগাম সবজি চাষ করছিলাম। বন্যার পানিতে সব ডুইবা মইরা গেল। অহন পানি নাইম্মা গেলে আবারও দ্বিগুণ পয়সা খরচ কইরা ফসল ফলাইতে হইবো। বড় ক্ষতি অইয়া গেল আমাগো।
গোসাইরহাটের মাঝেরচরের কালা মিয়া বলেন, চার বিঘা জমির রোপা আমন পুরাডাই বানের পানিতে ভাসাইয়া লইয়া গেছে। সামনে যে নতুন কইরা চাষবাস করমু হেই সামর্থ্য নাই। তাড়াতাড়ি পানি নাইমা গেলে হয়ত কিছু ধান ঘরে উডাইতে পারমু।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১৩ আগস্ট থেকে শরীয়তপুরে পদ্মার পানি রয়েছে বিপৎসীমার ওপরে। গত সোমবার পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গত চার দিনে প্রায় ৪১ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। আজ শুক্রবার সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মার পানি বইছে বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। আগামী ৪/৫ দিনের মধ্যে জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে এবং কৃষি জমি থেকে পানি সম্পূর্ণ নেমে যাবে বলে আশা করছে পাউবো।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. গোলাম রাসুল বলেন, বন্যার পানিতে সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। তবে যেহেতু দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি নেমে যাচ্ছে তাতে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসবে। বন্যার পানি নেমে গেলে মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করা হবে। তথ্য সংগ্রহ শেষেই বলা যাবে এ বছরের বন্যায় জেলায় কী পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে।