পোশাকের কারণে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে তরুণীকে হেনস্তার ঘটনায় আদালতের ‘নারীবিদ্বেষী’ পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ৪৯ জন নারী অধিকারকর্মী। আজ বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানান তাঁরা।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৮ মে নরসিংদী রেলস্টেশনে অপেক্ষারত এক তরুণীকে পোশাকের কারণে ‘যৌন হেনস্তার’ ঘটনায় অভিযুক্ত নারীকে জামিন শুনানির সময় আদালত ওই তরুণীর পোশাককে ‘দৃষ্টিকটু’ বলে ‘নারীবিদ্বেষী’ মন্তব্য করেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত আদালতের অসাংবিধানিক এবং অগণতান্ত্রিক পর্যবেক্ষণের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন—জেন্ডার বিশ্লেষক ফারহানা হাফিজ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নোভা আহমেদ, গবেষক ও উন্নয়নকর্মী মাহফুজা মালা, মানবাধিকারকর্মী নাই সু প্রু, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সাংগাতের সমন্বয়ক সোহানা আহমেদ প্রমুখ।
বিবৃতিতে জানানো হয়, দেশের সংবিধানের ২৮ ধারা অনুযায়ী নারীর প্রতি রাষ্ট্র কোনো ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি করতে পারবে না এবং নাগরিক হিসেবে নারী সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার পাবে। তাছাড়া জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা এর ১৪ নং পৃষ্ঠায় নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন প্রণয়ন না করা এবং বৈষম্যমূলক সামাজিক প্রথার বৃদ্ধি হ্রাস করার কথা বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী ৪৯ জন নারী অধিকারকর্মী মনে করেন, নরসিংদীর ঘটনায় অভিযুক্তের জামিনের পক্ষে থাকা আইনজীবীর বরাত দিয়ে আদালতের যে পর্যবেক্ষণ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে নারীর পোশাকের কারণে নারীর প্রতি যৌন সহিংসতাকে পরোক্ষভাবে বৈধতা দেওয়া হয়েছে এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ দেখানো হয়েছে যা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নারীর সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে।
বিবৃতিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহারের দাবি জানানোর পাশাপাশি যিনি এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তাঁর পদে থাকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থায় এমন কোনো অসংবেদনশীল ব্যক্তির পদে থাকার দরকার নেই যিনি এই ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ মতামত দিয়ে বাংলাদেশের নারীদের চলাচল এবং জীবনযাপনের স্বাধীনতার প্রশ্নকে হুমকিতে ফেলে।