দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং শ্রম আইন উপেক্ষার কারণে দেশের চামড়াশিল্প ক্রমাগত সংকটে পড়ছে। এর পাশাপাশি, ট্যানারি থেকে নির্গত বিষাক্ত বর্জ্যে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
আজ শনিবার সাভার পৌরসভার শিমুলতলার ওয়াইএমসিএ মিলনায়তনে ‘বিল্ডিং এ সাসটেইনেবল লেদার সেক্টর ইন বাংলাদেশ’ আয়োজিত এক সংলাপে এসব কথা বলেন বক্তারা। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক (স্বাস্থ্য কার্যক্রম ও প্রশিক্ষণ) ডা. রেজাউল হকের সভাপতিত্বে এর মূল প্রতিপাদ্য ছিল, ‘বাংলাদেশের চামড়া শিল্পে পরিবেশ সুরক্ষা, শ্রমিক ও স্থানীয় মানুষের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা।’
সংলাপে সবুজের অভিযান ফাউন্ডেশনের প্রকল্প সমন্বয়ক মো. কবীর হোসেন বলেন, সাভারের চামড়া শিল্প নগরে ১৪০টি ট্যানারি প্রতিদিন গড়ে ২২ হাজার কিউবিক লিটার বিষাক্ত তরল বর্জ্য নির্গত করছে। এই বর্জ্যে সোডিয়াম ক্লোরাইড, ক্রোমিয়াম, খার, দ্রবীভূত প্রোটিন ও জৈব পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে, যা আশপাশের নদী, জলাশয়, মাটি ও বায়ুকে ব্যাপকভাবে দূষিত করছে।
সাভার নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শামসুল হক বলেন, হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে বুড়িগঙ্গাকে রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে সাভারে স্থানান্তরের পর ট্যানারির বর্জ্য ধলেশ্বরী ও বংশী নদীকে ধ্বংস করছে। কিন্তু এই দূষণ রোধে কার্যকর কোনো সরকারি উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
সাভার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন খান অভিযোগ করেন, চামড়া শিল্প নগরে পরিবেশসম্মত চামড়া প্রক্রিয়াকরণ হয় না। কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে সম্পূর্ণ কার্যকর নয়। কঠিন বর্জ্য নিষ্কাশনেরও কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। ফলে সাভারের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আর চামড়া শিল্প ক্রমেই সংকটে পড়ছে।
সাভার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শওকত আলী বলেন, বেশি মুনাফার লোভে ট্যানারি মালিকেরা আইন মেনে চলতে আগ্রহী নন। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য এই মানসিকতা বদলানো অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের পরিচালক নাজমা ইসলাম মন্তব্য করেন, শুধু আলোচনা নয়, পরিবেশ রক্ষায় সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে আরও কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ এবং তদারকি বাড়াতে হবে।
ডা. রেজাউল হক বলেন, ট্যানারির তরল বর্জ্যে থাকা ক্রোমিয়ামের কারণে সাভারের নদীগুলো মাছশূন্য হয়ে গেছে। কৃষি জমির উৎপাদন কমে গেছে। দূষিত পানি ব্যবহারে অনেক মানুষ চর্মরোগসহ ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
মিতালী ট্যানারির মালিক মো. খোরশেদ আলম বলেন, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে চামড়া শিল্প কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি লাভ করতে পারছে না। তবে আমরা পরিবেশের ক্ষতি না করে এই শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে।