যশোর প্রতিনিধি
যশোর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুলের বিরুদ্ধে সাইবার সিকিউরিটি আইনে মামলা করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল আলম চৌধুরী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিপুলকে ধরতে পুলিশ অভিযানে নেমেছে। এর আগে গত মঙ্গলবার লাইভে এসে আনোয়ার হোসেন বিপুল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনসহ কয়েক নেতার বিরুদ্ধে আপত্তিকর বক্তব্য দেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে মিলন এই মামলা করেন।
মামলায় শহিদুল ইসলাম মিলন অভিযোগ করেন, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে আনোয়ার হোসেন বিপুল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন বলে তাঁর কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে বিপুল তাঁকে ভয়ভীতি দেখান। মিথ্যা অভিযোগ এনে তাঁর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করাসহ ফেসবুকে বিভিন্ন মিথ্যা প্রচার চালিয়ে সভাপতির পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন বিপুল।
শেষমেশ চাঁদা না পেয়ে বিপুল হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যান। এর জেরে গত ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বিপুল তাঁর নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারসহ পদধারী বিভিন্ন নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেন। মিলন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ ধরনের প্রচারে তাঁর সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। এসব বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ কারণে মামলার বাদী শহিদুল ইসলাম মিলনের ২ কোটি টাকার মানহানি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
যশোরে গত দেড় মাসে ১৩ জন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে নিহত হয়েছেন সাতজন। একই সঙ্গে বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতায় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারি। সরকার দলীয় এক জনপ্রতিনিধির প্রশ্রয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ওঠে এসব অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ। গত বুধবার থেকে যশোর শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশের তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত যশোর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ জাহিদ হোসেন মিলন ও যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা মেহবুব রহমান ম্যানসেলসহ আড়াই শতাধিক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কাউন্সিলর মিলনকে গ্রেপ্তারের পরদিন গত বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের প্রত্যাহার দাবি করে কর্মবিরতিসহ লাগাতার কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন যশোর-৩ (সদর) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সমর্থক সদর উপজেলা ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা।
সম্প্রতি যশোরের পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ। এক পক্ষের দাবি, পুলিশ অভিযানের নামে আওয়ামী লীগের এক পক্ষের হয়ে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে। অপর পক্ষের দাবি, পুলিশ প্রকৃত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্যে নানা অভিযোগ তুলে একটি পক্ষ অন্য পক্ষকে তুলোধুনা করে বক্তব্য দেওয়ায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যশোরের রাজনীতি।
যশোর সদর উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা দুই অংশে বিভক্ত। এক অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন সদর আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, অপর অংশের নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। তবে জেলা সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের কোনো বলয় নেই, তিনি নিজের মতো করেই চলেন।