যশোর প্রতিনিধি
যশোর শহরে রিকশা চালিয়ে সংসার চালান ইউনুচ আলী (৩৫)। তাঁর দাবি জীবনে কখনো তিনি আগ্নেয়াস্ত্র দেখেননি। অথচ সেই অস্ত্রের জন্য বেধড়ক পিটিয়ে তাঁর শরীরে কালশিটে ফেলে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যদের বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন র্যাব-৬ যশোরের কোম্পানি অধিনায়ক মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।
গতকাল রোববার দুপুর ৩টার দিকে ইউনুচের বাড়িতে অভিযান চালান র্যাব সদস্যরা। পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার না পেয়ে আজ সোমবার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে নির্যাতনের বর্ণনা দেন তিনি। ইউনুচ যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ইউনুচ আলীর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মুকছেদপুর গ্রামে। তাঁর বাবা মৃত শাহাদাত মোল্লা। যশোর শহরের রায়পাড়া সার গোডাউন এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী, দুই সন্তান ও মাকে নিয়ে বাস করেন ইউনুচ। নিয়মিত রিকশা চালানোর পাশাপাশি সার গোডাউনেও কাজ করেন তিনি।
আজ প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখানোর সময় অঝোরে কাঁদছিলেন ইউনুচ। তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের ফলে কালশিটে তৈরি হয়েছে। দুই পায়ে আঘাত করার কারণে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন।
এ সময় ইউনুচ বলেন, ‘৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী চারজন আমার বাসায় আসলেন। এসে জিজ্ঞাসা করলেন আপনার নাম কি ইউনুচ? বললাম, হ্যাঁ। এই বলেই তাঁরা ঘরে ঢুকে গেলেন। ঘরে ঢুকেই তাঁরা বললেন, আমরা র্যাবের লোক। এরপর ঘরের এদিকে-ওদিকে একটু তাকিয়েই তাঁদের মধ্যে থেকে একজন আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, মালডা কই? বুঝতে না পারাতে আমি বললাম, কী জিনিস স্যার? তখন তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, বুঝবি! যখন হাত-পা বেঁধে ঝুলাব! কিছু না পেয়ে আমাকে হাতে হ্যান্ডক্যাপ লাগালেন তাঁরা। আমার মেয়েটার হিজাবটা দিয়ে আমার মুখ বেঁধে ফেললেন। এরপর তাঁদের কাছে থাকা লাঠি দিয়ে তাঁরা এলোপাতাড়ি নির্যাতন করতে থাকেন। দুপুর ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তাঁদের এলোপাতাড়ি মারার কারণে শুধু কাতরেয়েছি। মুখ বাঁধার কারণে চিৎকারও করতে পারিনি। তারপরও তাঁরা নির্যাতন বন্ধ করেননি।’
ইউনুচ আরও বলেন, ‘আমি কখনো অস্ত্রই দেখেনি। তারপরও আমাকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।’
যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার পার্থ প্রিতম চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘আমি বাইরে রয়েছি। বিষয়টি জানা নেই।’
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ঘটনাটি জানা নেই।
র্যাব-৬ যশোরের কোম্পানি অধিনায়ক মোহাম্মদ সাকিব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ইউনুচের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। আমাদের কাছে তথ্য ছিল, ইউনুচের বাড়িতে অস্ত্র রাখা আছে। জিজ্ঞাসাবাদে অস্ত্র রাখার কথা ইউনুচ ও তাঁর মা স্বীকারও করেছেন। তবে অভিযানের আগেই যাঁর অস্ত্র তিনি নিয়ে গেছেন।’
মানবাধিকার সংগঠন ‘রাইটস যশোর’-এর নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কেউ অপরাধ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। কিন্তু নির্যাতন করা মানবাধিকার লঙ্ঘন। রিকশাচালক ইউনুচের ওপর নির্যাতনের ভয়াবহতা দেখেছি। অমানবিক নির্যাতনের চিহ্ন তাঁর শরীরে ফুটে উঠেছে। তাঁর আইনগত ব্যবস্থার দরকার হলে আমরা তাঁকে সহযোগিতা করব।’